সরকারি আধিকারিক। কবি, প্রবন্ধকার, অনুবাদক, সুরকার, গায়ক। অন্যধারার কবিতায় তাঁর চলার পথের শুরু নব্বইয়ের দশকে। এমন দীক্ষিত পাঠক বড়ো দুর্লভ।

একটা লাল ফ্রকের নাম জানতে চেয়ে 

ছবির এই আলোটার মতন, 

                   এই লেখাটাও অর্ধেক

কিছুটা জ্বলছে না

অধিকাংশ অন্ধকার... 


কৌশিক চক্রবর্তী

 

শুনশান একটা রাস্তা। রাতের ঝড়ের পর শহরটাকে চেনা যায় না আর। আমার আশেপাশে, খানিকটা এগিয়ে অথবা আরও অনেকটা দূরে – পাড়ার পর পাড়া, গ্রামের পর গ্রাম যেন বা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ে আছে এখানে ওখানে... এই কদিন আগেই এই শহরে কত পাখি আসতো। কাঠবেড়ালি। ওরা এই সব গাছেই থাকতো না? গাছগুলো আর নেই। ওরাও আর আসবে না। একটা ঝড়ে ওদেরও জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। 

আমরা মরে গেছি বহুদিন। আমাদের বোধ বলে কিছু বেঁচে নেই আর। তবু কেন যে দৃশ্যের জন্ম হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু কাছের পাড়ার মোড়ে বেড়াজাল দেওয়া। কারোর সেখানে ঢোকা বারণ, বারণ ভেতর থেকে কারোর বেরিয়ে আসাও। দূর থেকে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় – বেড়ার এপার থেকে। ওপার থেকে মুখঢাকা সে হাত নেড়ে সাড়া দেয়। কেউ কারোর হাসি দেখতে পাই না। দুজনে দুজনের কুশলকামনা অনুভব করি। মাঝরাতে কার যেন কাশির শব্দ শোনা যায়। কারা যেন রাতের অন্ধকারে পাড়ায় কারা যেন অনেকদূর থেকে ফিরে এসে নিজেদের নিজেদের ঘরে নির্বাসনে চলে যায়। কারা যেন এসে হিসেব নিয়ে যায় তাদের। তাদের কারোর কোনো নাম নেই। বা আসলে আছে, শুধু ছুঁয়ে দেখা বারণ। 

 

একাই বুঝি চেনো অবিশ্বাস করার কানাগলি ?

কেউ কেউ যে আর বাড়ি নেই আজকাল –

কে বলবে ?

আলোজ্বলা চালডাল থেকে মোমবাতিরা আটকে গেছে

কথাবার্তার পাঁচিলে

 

কাগজ থেকে একবারও পেন্সিল না সরিয়েই

ছোট ছোট নাম লিখতে –

আজ তাদের মুখ মোছাবে বলে

চাপা গলায় ডেকে নিচ্ছে রেসকোর্সের নেশাতুর চাঁদ।

 

পাগল ফুটপাথে আজ নিশ্চয়ই কেউ 

আবার কোনো অবাধ্য চিঠি দেবে – 

ছুঁয়ে দিলে আজ কিন্তু বলতে চাইব না:

আরও একবার 

তীব্র একটা ভয় ঘিরে ধরে। তাহলে কি মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে খুব কাছে। পুরোনো পাখার রেগুলেটর বাড়িয়ে দিই। বেড়ে চলা ঘড়ঘড় শব্দ কাশি ঢেকে দেয়। এক নিজস্ব বর্ম লাগানো মায়াপৃথিবীর মধ্যে ঢুকে পড়ি আমি। 

রাস্তার দুপাশ জোড়া স্তব্ধতা। একটা স্যুর-রিয়াল পৃথিবী – যেন বা ফ্রিজশটে আটকে আছে। এই ছবির আলোটার মতন। অর্ধেক সাদা দাগ দেওয়া চৌকাঠ পেরিয়ে ঢুকে পড়ি অন্ধকার করিডোরে। সারি সারি তালাবন্ধ ঘর। ভয়ংকর এক নীরবতা। এই পাঁচতলায়, একা... ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি... কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। রহস্যময় শব্দ আর সংখ্যার ভিড় সরে সরে যায়। স্পর্শে বিষ। নিজের মেয়েটাকেও জড়িয়ে ধরে আদর করতে ভয় করে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে থাকি ঘুমিয়ে পড়া মুখের দিকে। নাকের নিচে হাত রাখি। কেন রাখি? বিশ্বাস করো, জানি না। শুধু ভয় করে। ভয় করে খুব। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে – ধু ধু করা এপার ওপার দেখতে দেখতে, থমকে থাকা বারান্দা দেখতে দেখতে ভয় করে। এই রাস্তায় নিজেকেই যেন একমাত্র জীবন্ত ভেবে – ভয় করে। এই শহরটাকে কী অচেনা লাগে। আমি রাস্তাঘাট চিনতে পারি না। আমি বাড়ি ফিরতে পারি না আর। মনে হয়, আমার ঘুম যেন না ভাঙে।   

 

তেতো প্যারাডক্সের এই দালানে এত সহজে পালানো যায় না –

যেখানেই হাঁটার রাস্তা, সেখানেই অদৃশ্য একটা জেলখানা

কাঁধে হাত রেখে গল্প করে।

একটা লাল দাগের ব্লেড                 আড়ালে

ঘাড়ের বাঁ-দিকে রোজ কথা বলে

কয়েক ধাপ নেমে দাঁড়ালেই বুকের বোতামগুলো গান গাইবে –

রাত ন’টার ট্রাম চিরে দেবে সমস্ত সরল বাক্যের খসড়া 

 

একটা চেয়ারের অ্যাবস্ট্র্যাক্ট একটু একটু করে

অচেনার পা হয়ে যাচ্ছে।

পা অন্ধ হলেও কাদের মুখস্থ হওয়া গমনের গানে ভয় লেখা

 

অন্য পাড়া থেকে কেউ কেউ 

ছবির বই বিলোতে এসেছিল গতকাল –

তারপর থেকেই দাঁতে কালো চশমার ডাঁটি কামড়ে 

খসখসে গলায় কারা যেন অন্ধকারে

সেইসব জুতোর ছাপে দাগ দিয়ে রাখছে 


মনে আছে? শিন্ডলার্স লিস্ট সিনেমাটায় সারা পর্দা জুড়ে সাদা কালো মৃত্যু। তার মধ্যিখানে একটা ছোট্ট মেয়ে লাল ফ্রক পরা। তাকেও মৃত্যুর ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই একটা চরিত্র, তার পোশাক সেই ছবিতে রঙিন। চমকে উঠেছিলাম। সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। একটা গান আছে – শুনেছো? ‘জানেওয়ালে সিপাহী সে পুছো/ ও কাঁহা যা রহা হ্যায়...” এই মেয়েটাও এমনি। একা একা সে হেঁটে যাচ্ছে। হেঁটে যাচ্ছে তার লাল ফ্রক। অনেকগুলো সাদা কালো পেরিয়ে। তবু, সে জানে না কোথায় যাচ্ছে। জানেও না আদৌ পৌঁছতে পারবে কি না। 

 

তেমনই একটা মেয়ে তার বাবার কাঁধে চড়ে যাচ্ছিল বাড়ি। বাড়ি– এই কথাটা লিখতেই ধন্দে পড়ে গেলাম। কোনটা যে তার বাড়ি সে কি নিজে জানে। যে বাড়িতে তার জন্ম, যে শহরে তার খেলাধুলো বেড়ে ওঠা, সেই শহর থেকে, সেই শহরের একচিলতে বাড়ি থেকে সে আরও অনেকের সঙ্গে আজ হেঁটে যাচ্ছে কোথায়? কতদূর? যে গ্রামটার দিকে সে যাচ্ছে, যে বাড়িটার দিকে সে যাচ্ছে, সেটা কি সত্যিই ‘তার’ বাড়ি? সে কি জানে, সে কোথায় যাচ্ছে? আর কতদূর তাদের হাঁটতে হবে? সে কি তার ভাঙা পুতুলটা সঙ্গে নিয়েছে? তার পোশা বেড়ালটা –খেলার সঙ্গী – তার কী হবে? ও আজ খেয়েছে কিছু? কী করে খাবে? আজ যে দরজা বন্ধ করে ওরা বেরিয়ে পড়েছে। বেড়ালটা আজ হয়ত সারাদিন বন্ধ দরজার বাইরে কেঁদে কেঁদে ফিরে যাবে। অভিমান হবে ছোট্ট মেয়েটার ওপর। এমনিভাবে না বলে কেউ চলে যায়? 

 

এই ছবি দেখে তোমার মনে পড়বে পিকাসোর কথা। তুমি ভাববে, আহা, শিল্পীরা তো এমনই – prophetic… 

 

আর তোমার মনে হবে – এই সব উটকো লোকগুলো এবার দলে দলে এসে অসুখ ছড়াবে। আর তুমি সবাইকে জানিয়ে দেবে – এদের কোনোমতেই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া যাবে না। তোমার জীবন সবচেয়ে দামী। তোমার ছেলেমেয়ের। তুমি ট্যাক্স দাও যে। তুমি তাই দৌড়ে গিয়ে কিনে আনবে আরও দু’লিটার স্যানিটাইজার, আরও দশকিলো চাল, আলু, মাখন, ডিম, চিকেন... আর ভাববে, কতদিন আইসক্রিম খাওয়া হয়নি। ইন্টারনেট দেখে রসগোল্লা বানাবে বিকেলে। আর ঠিক তখনই কারা যেন হেঁটে যাবে, হেঁটেই যাবে ... একদিন পৌঁছে যাওয়ার আশায়...  

অনেকটা রাস্তা হাঁটতে হবে এভাবে। কতক্ষণ, কতদিন? কতটা পথ পেরোলে তবে সে পথিক হয়ে উঠবে? ওই মেয়েটার পাশ দিয়েই কি চলে গেল সেই ছেলেটা, যে চাকালাগানো সুটকেসের ওপর ঘুমিয়ে পড়েছে। হেঁটে গেল কি সেই একদল হাড়হাভাতে মানুষ, যারা রাস্তা চিনবে বলে এইবার ট্রেনলাইনের ওপর দিয়ে হাঁটবে। তারপর, কী অসম্ভব ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে ট্রেনলাইনেই? আর তারপর ভোররাতে তাদের বাড়িফেরার রাস্তায় পড়ে থাকবে কয়েকটা শুকনো পোড়া রুটি – রক্তের ছিটে লাগা। অনেকদূরে তাদের ছোট্ট গ্রামে কারা যেন অপেক্ষা করে থাকবে তাদের জন্য। এই পথ যদি না শেষ হয়... তবে? চুপচাপ, একটা রাতের অন্ধকারে একদল মানুষ– শূণ্য হয়ে যাবে কোনও একটা খাতার হিসেব থেকে। 

 

আর তুমি, ভোরবেলা কফির কাপ হাতে খবরের ইন্টারনেটে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে কাকে যেন ফোন করে বলবে – আজকাল এত মৃত্যুর খবর দেখি সকালে উঠেই ... আমার আর কাগজ পড়তে ইচ্ছেই করে না। তোমার ফেসবুক পেজে লকডাউনের সন্ধ্যায় নতুন রান্নার ছবি জ্বলজ্বল করে উঠবে বন্ধুদের ‘লাইক’-এ...  আর আমার মনে হবে, তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলি – 

I can’t breathe !

 

মনে আছে? সেই সিনেমাটার কথা? ‘মন নিয়ে’... সমুদ্রতীর। উত্তমকুমার বসে। আর সুপ্রিয়া দেবীর লিপে লতা মংগেশকর গাইছেন... “চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়, আঁধারের শেষে ভোর হবে” – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর করা গান। আর একবার শুনবে এখন?

আজ সকাল থেকে, মাথার ভেতর ওই গানটার দুটো লাইন পাক খাচ্ছে। দুটো লাইন, মুকুল দত্তর লেখা –

“হয়ত বা মাঝপথে পথটাও ফুরিয়ে যাবে

চোখের জলের কথা শুনবে না কেউ ভোরের আলোর কথা ভেবে...”

ভোরের আলোর কথা ভেবে ভেবে তাহলে কি সত্যিই চোখের জলের কথা ভুলে যাব আমরা। আবার যেদিন শপিং মলে, রেস্তোরাঁয়, পাবে – রঙিন আলো জ্বলে উঠবে, আবার যেদিন চারপাশে জেগে উঠবে মায়াবী বিভ্রম, সেদিন আমরা এই সব ভুলে যাব বলো? 

ভুলে যাব, তোমার খেতে বসার আরামে হয়ত খানিকটা দূরে কত মানুষ, ঝড়ে ঘরহারা, এই দুঃসময়ে কাজহারা, উপার্জনহীন – সামান্য একমুঠো খাবারের আশায় থালা নিয়ে, আতুর আকুতি নিয়ে দাঁড়িয়েছে লাইনে। এই দেখো, খুঁজে খুঁজে একটা ছবি পেলাম। ওদের মুখগুলো দেখো, চোখগুলো – দেখো, আর নরম মাংসের ঝোল ঢেলে দাও তোমার ভাতের চুড়োয়। 

গল্পে, কবিতায় পড়েছিলে না – কলকাতা শহরের বুকে ফ্যান দাও বলে বুভুক্ষু মানুষের ভিড়? ছবি দেখেছিলে না? মৃত মায়ের শুকনো স্তন মুখে নিয়ে শিশু কাঁদছে ফুটপাথে। একবারও মনে পড়েনি এবার? শিল্প-সাহিত্য সব তত্ত্বকথা তবে, বলো? রাতের খাবার থেকে মৃত মাংসের গন্ধ পাওনি? নামহীন, চিহ্নহীন, পরিচয়হীন, স্বজনহীন – হাড়হাভাতে মানুষের মৃতদেহের গন্ধ? 

অস্পষ্ট শ্মশানের রাস্তায় 

যখন একজন তার খিদে নিয়ে হেঁটে যায় –

তখন অনেক দূরের দিগন্তরেখায় সন্ধে নামতে থাকে।

রংগুলো ভারী হয়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় 

আলোর শববাহী ছুরির দিকে –

 

আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য 

যে কোনো একটা অস্ত্রই যথেষ্ট।

কিছুই বলবে না সে, কিছুই বলার নেই তার।

 

উত্তর না জানা জীবাণুর ঘর থেকে সে 

শূণ্যতার দিকে ভিজে গেছে।

ডোরাকাটা পাজামার ত্বকে, চেরা চোখে

শুকনো রুটির টুকরোগুলো জড়িয়ে জড়িয়ে ...

 

একটা সাদা নিঃসঙ্গতা কুড়িয়ে নিয়েছে জুতোর প্রতীক।

 

লুকোনো জ্বর হয়ত শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরে যাবে

চাপা গলায় অ্যানিমিয়ার জিভ

তাকে বলে যায় –

মুখোশ নামিয়ে রাখো।

 

বমি করা ফুটপাথে এইবার তোমার নাম ডাকা হবে।

ফাঁকা থালাবাটি নিয়ে তৈরি হও...

 

শূণ্যতা রান্না নামিয়েছে   

ভুলে যাওয়ারই তো কথা। ইতিহাস, পরিচয় – এমনকি নিজের নাম। ভুলে যাব, আয়নার উল্টোদিকে দাঁত ব্রাশ করে হাসতে থাকা ক্ল্যাসিকাল ভাঁড়টাকে। ভুলে যাব, এই মৃত্যু, ভুলে যাব এই ঘরে ফিরতে চাওয়ার চলাচল, ভুলে যাব সেই ছোট্ট লালফ্রক – ভুলে যাব, নামহীন কত পায়ের চিহ্ন নিয়ে এই পড়ে থাকা পথ ভিজে আছে চোখের জলে। 

 

ভুলে যাব – অন্তত কিছুদিন আমাদের কোনো চাহিদা ছিল না, কোনো choice ছিল না, একটা সরল minimalist জীবনে আমরাও ছিলাম – হাসিমুখে আমরা সেদ্ধভাত খেয়ে নিয়েছিলাম, আলুর খোসাগুলো জমিয়ে রেখেছিলাম – তা দিয়েও তরকারি বানিয়ে নেওয়া যায় বলে, মাছ না খেয়েও দিনের পর দিন দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছিলাম, জীবনে অন্তত কিছুটা সময় শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয় – মনখারাপ করেছিলাম, কষ্ট পেয়েছিলাম – চেনা অচেনা সকলের জন্য – এই সব ভুলে যাব বলো?

মাল্টিপ্লেক্সের রঙিন নেশায় আমরা আবার ভুলে যাব, হাওয়ায় মারণ রোগ ভেসে বেড়ালেও – অন্তত কিছুদিনের জন্য আমাদের এই শহরের আকাশ, তার হাওয়া কেমন ঝকঝকে হয়ে উঠেছিল – এ শহরের অনেক জানালায় এসেছিল কাঠবেড়ালি, বুলবুলি, মৌটুসি -  এ শহর যে ওদেরও – ভুলে যাব। 

আবার গাড়ির ঝাঁক নামবে রাস্তায় – আবার উৎসবের হৈ-হল্লা – আবার ধুলো ধোঁয়ায় মুখ ঢাকবে চারপাশ – মুখ ঢাকব আমরা – আর মাঝপথে আমাদের এ জীবন, এ পথ – ফুরিয়ে যাবে। যে জীবন ফড়িঙয়ের, দোয়েলের... 

ভোরের আলোর কথা ভেবে, ওই গানটার মতন, সেদিন চোখের জলের কথা কেউ আর শুনব না। এটাকেই তো collateral damage বলে – বলো? 

 

মুখ তুলে দেখার আছিলায়       মুখগুলো অপর –

স্কাইলাইট থেকে রঙিন পৃষ্ঠার বিকেল হয়।

বৃষ্টি হবেনা। অতএব সেই ফাঁকে

অবাস্তব পরীর কাজল আর আলুবোখরার নজর নিয়ে 

বিকেলেরা সুখী – যতিচিহ্ন ছাড়াই

রঙিন রঙিলি –

ছোট একটা মেয়ে বড় হয়ে তার বাবার মুখ আঁকতে পারবে 

বিকেলের আলচুড়ি গল্প ধার করে – ঝুম হয়।

 

মুখের গল্পের দিকে তলিয়ে যাওয়া অনেকগুলো 

মুখস্থ করা অ্যালিবাই

 

কোনও কোনও বেচেথাকা কোথায় যেন সজল ...

আলোর জ্বলা আর নেবা

সজলের মুখের ওপর দিয়ে

 

দুধরঙের বাড়িফেরার বিকেলে তিনরাতের হাঁটা রাস্তা বইতে 

একটা বালিকাবেলার লালফ্রক

অনেকগুলো মুখের সঙ্গে

ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা

হারিয়ে যাচ্ছে লালমরিচের ক্ষেতে 


‘চাঁদ বণিকের পালা’ নাটকে পড়েছিলে – মনে আছে ? চাঁদ বলেছিল – 

 

ওই লাল ফ্রক পরা মেয়েটাও পাড়ি দিয়েছিল। আরও অনেকের সঙ্গে। বাড়ি ফিরবে বলে।

"পায়ের চিহ্ন নিয়ে পড়ে থাকা পথটার গায়ে
তার আসার দিনের কথা লেখা আছে বুঝি।
সব চলা শেষ করে আমার আঙিনাটিতে
ফিরে তার আসার দিনের কথা লেখা আছে বুঝি..."

 

সেই মেয়েটার কথাও লেখা ছিল হয়ত। শুনেছি - সেই লাল ফ্রকের মেয়েটা হাঁটছিল। তিন রাত তিন দিন। 

ঘামে গরমে। 

অনেকে বাড়ি ফিরেছিল সেদিন। লাল ফ্রক পরা মেয়েটা পারেনি। বাড়ি থেকে ঠিক ঘন্টাখানেক দূরে এসে মেয়েটা থেমে গেছিলো। 


[এই লেখায় ব্যবহার করা ছবিগুলোর মধ্যে দুএকটা লেখকের তোলা, শেষ ছবিটার শিল্পী কৌশাণী চক্রবর্তী। পিকাসোর ছবি এবং বাকি আলোকচিত্রগুলো আন্তর্জালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অন্যান্য সাইট থেকে প্রাপ্ত। সেই প্রাপ্তি সূত্রে ঋণস্বীকার।]

  1. https://amp.theguardian.com/film/2018/dec/06/schindlers-list-25th-anniversary-steven-spielberg-holocaust  
  2. https://www.tallengestore.com/products/the-mother-leading-two-children-art-by-pablo-picasso-international-shipping



Post a Comment from facebook

2 Comments

  1. বা! অসাধারণ লেখা। কী নেই এ-তে! একটা কিংবা অসংখ্য কিংবা সংখ্যাটাই যেখানে শুধু একটা ফ্যাক্টর, সেই জীবনের জন্ম টু মৃত্যু--- মৃত্যু টু জন্মে ফিরে আসা যায় এই লেখায়। একটা দীর্ঘ কবিতাই পড়লাম আমি। ভয় সেখানে তরল, সংশয় সেখানে তরল ও কঠিনের মধ্যবর্তী স্তরের, আর অজস্র মৃত্যুর মধ্যে লাল-ফ্রকটাই সেখা্নে অবশিষ্ট কঠিন বাস্তব। কবির কাছ থেকে পাওয়াটা শিরোধার্য। কার্যকারণে কবি সরকারি অধিকারী হলেই তাঁকে জাবেদায় আটকে থাকতে হবে এমন কথা কোন চ্যাং-মুড়ি-কানিই বা বলেছে!

    ReplyDelete
  2. প্রতি দু বছর পর এমন একটা লেখা পড়তে পেলে আর কিছু চাই না । আমার এই বলায় কোনো আবেগ নেই,দেখনদারি নেই। শুভেচ্ছা ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post