উষ্ণ দীর্ঘ শ্বাস
নিঃশব্দে
জল গড়িয়ে আসে
ঠিকানাহীন
পেনসিল
গুনিতকে ইরেজার
মুছলেও
লেখার
দাগ থেকে যায়
শুকনো
মৃদু
খিদের
কান্না
রুটি
রেললাইন
পেট
ভরা জল
এভাবে
লেখা
হচ্ছে
এভাবেই
মোছা
বারবার
মুছলে
মোছার
দাগ থেকে যায়
অন্ধকার,
অভিজ্ঞতা এবং অবসাদের দৈনন্দিন। সময়ের এই খননটুকু আগলে রাখতে চাইলো রেহেল।
রক্তচাপের কঠিন গদ্যে,
রেহেল বেরিয়ে এলো তার কবেকার কবিতার ঘর থেকে। আগে জানানো হয়েছিল, রোয়াক সংখ্যা আসছে। হ্যাঁ, রোয়াক সংখ্যাই বেরোবার কথা ছিল। না, রোয়াক সংখ্যা বেরোয়নি।
অধিকাংশ কাজ হয়ে যাওয়া সত্বেও পিছিয়ে দেওয়া হয়। কবিতার রং-রস-সৃজন থেকে অনেক দূরে তখন আমাদের
মন-মনন। মনে হচ্ছিল এ কবিতার সময় নয়। অতিমারি তখন চরমে। সংশয়,
আশঙ্কা, কোটি কোটি পা,
খিদে ও আঘাত— ছিটকে দিচ্ছিল আমাদের যাবতীয়। এই ক্ষতস্থানে দাঁড়িয়ে কোনও সংবেদনশীল সৃজনই একে এড়িয়ে যেতে পারে না। পারিনি। তাই ঠিক হয়— এই মৃত্যুপথ, দীর্ঘ লকডাউন এবং কষ্টচিহ্নকে নিয়েই হবে রেহেলের পরবর্তী সংখ্যা। কাজ শুরু হলো। এরই
মধ্যে ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়লো মৃত্যুঝড়। উমপুন। উপড়ে গেল সামান্য
সম্বল। দেউলবাড়ী, চকপাটালি, মহিষপুকুর, বাঁশতলি, কুমিরমারি আরও কত গ্রাম, স্রেফ নিশ্চিহ্ন হতে বাকি থাকলো। বাঁধ ভাঙলো। ছাদও। ক্ষেত, বরজ, বাগান, জলা- যেন বিকট এক শ্মশান। এই সব ক্ষত আর তার
চিহ্ন, লিপিতে এল রেহেলের পাতায়।
ডাক দিলাম বিভিন্ন পেশা ও ক্ষেত্রের মানুষকে, তাদের সুতোয় দিনগুলো গেঁথে দিতে। সাড়া দিলেন, স্পর্শ দিলেন, সমস্ত স্তরের মানুষ। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। চিকিৎসক থেকে কৃষক, সাংবাদিক থেকে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিক— সকলে তুলে ধরলেন তাদের যাপনকথা। যেন ভিখিরির ঝোলা থেকে, অগণিত খুচরো শব্দ, খুলে দিয়ে গেল আমাদের একা থাকার ধ্যান। হাজারটা চোখ ঔদাস্য ফেলে উড়ে গেল ডানায়।
নড়ানো
যায়না এমন পাথরের মতো বিশুদ্ধ নাই বা হলাম। নাই বা করলাম কবিতা নিয়ে একটা সংখ্যা। সময়ের শব্দ কে উপেক্ষা করে, এমন বধির রেহেল নয়।
ব্যক্তিগত নির্জনতাকে ফেলে অন্যের ভাষা ও শব্দের সিঁড়ি দিয়ে চড়তে চড়তে কতটুকু
তফাৎ হলো জানিনা। কিন্তু বুক বুক হলো একটা সংখ্যা।
একা নৌকা বিভ্রম মাত্র। যে জলে দাঁড় নেই, মৃদুমন্দে পাল নেই, সে দিগন্তে শ্যাওলার স্বরলিপি শুধু। সুর নেই। বৃষ্টির গুনগুনও। রেহেল তাই বাসা বেধে রাখে, কখন রোদ্দুর উড়ে আসবে। এই সংখ্যাটা হতই না, যদি না একদিন পার্থ-দার সাথে কথায় কথায় খুলে যেত ভাবনার জানলাটা, আর সেই জানলা দিয়ে উমা-দা এগিয়ে দিত আর্যনীল-দার লেখা একটা প্রবন্ধ। এইসব আলোবাতাসেই এই সংখ্যার অঙ্কুরোদগম। শুধু কি তাই, একে অন্তরের সিঞ্চনে স্নেহ দিয়েছেন উমা-দা আর অনির্বাণ। আমাদের আন্তরিক ভালোবাসাটুকু তোমাদের জন্য। এভাবেই থেকো। (পার্থসারথি ভৌমিক, উমাপদ কর, আর্যনীল মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ বটব্যাল)
যাঁরা লিখলেন, তাঁদের বলেছিলাম— কবিতা লিখবেন, নাকি গদ্য; তা জানিনা। যেভাবে খুশি যেমন খুশি লিখুন। শুধু লিখুন সেই রক্তস্রোতের কথাগুলো, যেগুলো মেরুদন্ডে বরফ এনেছিল। লেখার সঙ্গে যদি অন্য কিছু দিতে মন চায়, সেগুলোও দিন। ভিডিও, অডিও, গ্রাফ, ফটোগ্রাফ, চার্ট, ইলাস্ট্রেশন যা খুশি। সিরিয়াস লেখালিখিতে সে চল নেই যে! তাতে কি যায় বা আসে! আমরা নতুন এবং অন্যরকমের পূজারি। সফল নাকি ব্যর্থ সে বুদবুদ মৃদু হেসে যায়।
মাংসের
সন্ধানে এত দূর হেঁটে এলে
এতটা
হাঁটলে দরজা খুঁজে পেতে
মাংসাশী
চিরকালই ছিল। এখনও। শুধু এটুকু বলতে পারি, রেহেল শেকড়ের শব্দ ভালোবাসে। পুকুরের
ওপরে যে পাতাটা ঘুরতে ঘুরতে পড়েছিল, তাকে ভাসিয়ে রাখতে ভালোবাসে। লেখকের
স্বাধীনতাও ভালোবাসে। তাই লেখায় ব্যবহৃত চিত্র, তথ্য, মন্তব্য ও মতামত লেখকের
নিজস্ব । রেহেল লেখার ক্ষেত্রে কাউকে কোনওভাবেই প্রভাবিত করেনি।
দেখুন
জল পড়ার শব্দ। শুনুন ছায়া মনে হয় চলে যাচ্ছে। একটা আবক্ষ ফাঁকা লোক, একটা ফাঁকা লোকের উপকরণ। আমরা শুধু চেয়েছি যেটুকু ফাঁকা থাকে সেই
রাস্তায় আলোর অবকাশ।
হয়তো এই জলের দাগ মিলিয়ে যাবে, কিন্তু কখনও ছিল বলে, মনে রাখা। যদি এই প্রয়াস
কারো দৃকপথের আলো হয়, কারো দৃষ্টিকোণ বদলের কম্পাস- তাহলেই সার্থকতা।
দীর্ঘ
দিনের কোলে শেখার উপায় থাকে
গন্তব্যের
পাশ দিয়ে যেতে যেতে
আঙ্গুল
তুলে রাখে দুঃখের দু-এক ফোঁটা।
টিম রেহেল
২১ জুন, ২০২০
সব লেখা পড়লাম। কমবেশি সব লেখাতেই মন্তব্যও করলাম। তাই, সম্পাদকীয়টাও পড়া দরকার ও সেখানেও দু-চারটে কথা বলা দরকার মনে করলাম। অসম্ভব ভালো একটা কাজ হয়েছে। সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়। ধন্যবাদ জানাই টিম রেহেল ও তার প্রাণপুরুষকে। এখানে আমার নাম আসাটা আনন্দের ঠিকই, কিন্তু এই প্রকল্পে কী আর এমন করতে পেরেছি! শুধু নির্দেশানুসারে পাশে থাকার চেষ্টা মাত্র, যা আরও অনেকেই করেছেন, দেখলাম। ভালো। সমস্ত লেখা পড়ার পর, একটা কথা টিম রেহেল-কে বলা প্রয়োজন মনে করছি। পেশাভিত্তিক লেখার-চাহিদা হয়তো তারা অনুভব করে থাকবেন। অধিকাংশ লেখাই তার আওতায় পড়েছে, সেটাও খেয়াল করলাম। কিন্তু কিছু লেখা আছে যার সঙ্গে তার পেশার কোনো সম্পর্ক আছে বলে অন্তত আমার পাঠাভ্যাসে ধরা পড়ল না। তাদের লেখাগুলো একটা সাধারণ বিভাগ খুলে রাখা যেত। সেক্ষেত্রে তার পেশার বিষয়টি কোনোভাবেই প্রাধান্য পেত না। অথচ লেখাটা রাখা যেত সসম্মানে। ক্ষতর (করোনা-১৯ বা উমপুন) সঙ্গে কতটা সাহিত্য মিলেমিশে যাবে, তা লেখকের আওতায়, কারণ প্রত্যেকেই স্বাধীন। কিন্তু সূচিপত্রানুসারে সেই লেখা সেই বিভাগে যেতে পারে কিনা, তা বিচারের ভার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। যাই হোক, মুক্ত-কণ্ঠে তবু বলব এটি অসাধারণ ও অভূতপূর্ব একটি কাজ। একটা সময়ের দলিল। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার অভিনন্দন ও ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকুন।
ReplyDeleteচেনা ছবি এত সহজ করে লেখা সহজ নয়। এই সম্পাদকীয়তে সেই কঠিন কাজটি করা হয়েছে অনায়াসে। এত ভালো একটি সংখ্যার জন্য টিম রেহেলকে ধন্যবাদ জানাই।
ReplyDeletePost a Comment