কোভিড-১৯
এর দিনগুলি, একটি কোলাজ
কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
১ লা জানুয়ারি, ২০২০
ওয়াইপারে বৃষ্টিছাট। অসময়ের বৃষ্টি। ৩১ শে ডিসেম্বর পেরিয়ে নতুন বছর শুরু হল- এমন দুর্যোগের মাঝে। নেশাটাও চৌপাট হয়ে গেল— গাড়ি চালাতে চালাতে মনে হল সুব্রতর। এবছর কেমন যাবে কে জানে? নাঃ, কুসংস্কার-টার নয়। কিন্তু বছরের প্রথম দিনে এরকম ধরনের একটা আশঙ্কা ভর করছে কেন যেন। ঘননীল-কালচে, ভারী মেঘ ,আকাশ থেকে মাটির ওপর ঝুঁকে পড়ছে। সামনে কি একটা দৌড়ে এল। রিফ্লেক্স, ব্রেকে পা — ক্যাঁ—চ ! কুত্তা! কাল সক্কালে আবার হাসপাতাল দৌড়োতে হবে। এখন বাজছে কটা? ঘড়ির দিকে চোখ গেল।০২:৩২.... ঘড়ির উজ্জ্বল ডায়াল হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল।
১২ ই ডিসেম্বর ২০১৯, চীন দেশের এক অঞ্চল, ১৪ তলার অফিসরুম।
বক্তা ১|| না, এ সম্পর্কে যা কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে তা আপাতত গোপন থাকাই ভালো। সংবাদমাধ্যমকে এখনই কিছু জানানোর দরকার নেই।
বক্তা ২|| স্বাস্থ্যশাখার সেক্রেটারি সম্ভবত: কালকের মিটিং -এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন। ওনার জনৈক সাহায্যকারীকে দুদিন আগেই ফাইলগুলো দিয়ে তার সারাংশ তৈরি করতে বলেছেন। আচ্ছা, ডাক্তার, আপনার কি মত?
বক্তা ৩|| এই ভাইরাস সংক্রমণটা খুব দ্রুত হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। এর সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। এই ড্রপলেট বাহিত রোগ এমনিতেই জনবহুল স্থানে দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু আমাদের কম্পিউটার জেনারেটেড
মডেলের চেয়েও এটাই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এটাই চিন্তার বিষয়।
বক্তা ১|| এ ব্যাপারে একটা কথা কিন্তু আপনারা মনে রাখবেন। আমাদের কোনো তথ্য যেন বাইরে না ছড়ায় এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে যেন না পৌঁছায়। যা কিছুর কথা বলার সেক্রেটারি মশায়ই বলবেন। আর দেখবেন, এ নিয়ে যেন মেডিকেল জার্নালে কোন তথ্য বা প্রবন্ধ না যায়।
৭ ই জানুয়ারি ২০২০, বেলা ১১টা, ভারতের একটি হাসপাতালের ডাক্তারদের লাউঞ্জ।
ড: নাদকার্নী|| খবরটা দেখেছেন? উহানে কিছু লোক ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত। মারাও গেছে।
ড: আম্রিক|| এটা ওই SARS, MERS এরই জাতভাই। সংক্রমণ হার খুব দ্রুত। এটাও একটা Zoonotic Diseases- পশুর দেহ থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়েছে। এতো আগেও হয়েছে। পশুশরীরের জীবাণু মিউটেট করে মানুষমারী হয়ে উঠেছে।সেই AIDS এ হয়েছিল ;তারপর তো আরও অনেকবার— Avian Flu, Zika, Ebola ।
ড: সুব্রত|| আমার কি মনে হয় জানোতো, এই মানুষ যেমন পশুত্ব লাভ করছে ,তাতে এরকম ঘটনা আর আজব কি! দিনদিন আমাদের মধ্যে হিংসে, বর্বরতা যেরকমভাবে বাড়ছে, তাতে মনুষ্যত্বের টিকে থাকা মুশকিল। এবার সবরকম Zoonotic Disease আমাদেরও হবে।
ড: নাদকার্নী|| সুব্রত, ডোন্ট বি সিলি। প্রথমত মানুষের মধ্যে সো-কলড্ পাশবিক প্রবৃত্তি বা হিংসে পশুদের থেকে অনেক বেশি। পশুরা কখনো অকারণে অন্য প্রাণীকে আক্রমণ করে না। মানুষ করে। মানুষ তার কল্পনাশক্তির জোরে হিংস্রতা ও নৃশংসতা দুটোকে আরো ভয়ানক করে তোলে। দ্বিতীয়তঃ জুনোটিক ডিজিজ ব্যাপারটা জীবাণুর জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হয়। জানি, তুমি ঠাট্টা করে বলছো। কিন্তু এটা পি.জে হয়ে গেল।
ড: আম্রিক|| উহানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পশু মাংস বিক্রির বাজার। কোন পশুর মাংস না বিক্রি হয় ওখানে? নানান ওয়াইল্ড অ্যানিম্যালেরও। বলছে তো বাদুড় আর প্যাঙ্গোলিনের শরীরে এই জীবাণু থাকে। দুটো প্রাণীর মাংস খুব তৃপ্তির সঙ্গে খায় ওখানকার মানুষ। সেই থেকেই ছড়িয়েছে। তবে আমার মনে হয় না এটা নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কিছু আছে। আমরা তো আর ওসব পশুর মাংস খেতে যাচ্ছিনা। তাছাড়া চীনের স্বাস্থ্য দপ্তর সর্তকতা অবলম্বন করেছে যথেষ্ট পরিমাণে। কিছুদিনের মধ্যেই সামাল দিয়ে দেওয়া যাবে পরিস্থিতির ।তবে হ্যাঁ, ভাইরাসটার সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি যেটা চিন্তার ব্যাপার।
ড: সুব্রত|| কেন জানিনা আমার মন একটু কু গাইছে। ব্যাপারটা যেন সুবিধার মনে হচ্ছেনা। যে-কোনো সংক্রমিত রোগই চিন্তার বিষয়। আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের ভাঁড়ার সীমিত। আর রোগটা যদি ভাইরাল হয় তবে ব্যাপারটা আরোই সমস্যার। যতক্ষণ না প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বের হচ্ছে ততদিন রোগটা সামলানো দুরূহ।
ড: নাদকার্নী || সুব্রত, তোমার ভবিষ্যৎ দৃষ্টিটা আপাতত মুলতবি থাক। শোনো এই শনিবার একটা ছোট্ট পার্টির ব্যবস্থা করছি আমার বাড়িতে। তোমরা এসো, সন্ধ্যাবেলায়, এই ধরো আটটা নাগাদ।
সকলে|| গ্রেট! দারুন ব্যাপার .....(খুশী, আনন্দ, হট্টগোল ...)
২১ শে জানুয়ারি, উহান স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রণালয়, চীন।
বক্তা ক|| বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে দলটি সাম্প্রতিক ভাইরাল সংক্রমণ— যেটার অফিশিয়াল নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯, নিয়ে তদন্ত করতে এসেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের গতকালের আলাপ-আলোচনা যথেষ্ট সন্তোষজনক পরিস্থিতিতে শেষ হয়েছে। আমরা ওনাদেরকে যে রিপোর্ট দিয়েছি সেটা অনুযায়ী সর্বমোট ৪১ জন এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে আক্রান্ত এবং সংক্রমণ মূলত: সীমাবদ্ধ থেকেছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই।
বক্তা খ|| এটা স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্তকারী দল মেনে নিল?
বক্তা ক|| না মানার তো কোনো কারণ নেই। আমরা যে যে অঞ্চল গুলো ওনাদের পরিদর্শন করাতে নিয়ে যাব, সেই অঞ্চল ছাড়া, অন্য কোথাও তাদের যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ-ব্যাপারে আমাদের
পার্টির উচ্চতম পর্যায় থেকে ডাবলু-এইচ-ও কে বার্তা পাঠানো হয়েছিল।
বক্তা গ|| তাহলে আজকের আলোচনা সভায় এর বাইরে অন্য কিছু তথ্য তো জানানোর নেই। আজ আমরা ওনাদের কোথায় পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাব?
বক্তা ক|| আজ আমরা ওনাদের স্থানীয় হাসপাতালে বিশেষভাবে প্রস্তুত 'সংক্রমিত রোগ' ওয়ার্ডে নিয়ে যাব আর একটা পরিদর্শক দল যাবে উহান ভাইরোলজি গবেষণাগারে।
১১ই মার্চ ২০২০, দূরদর্শণ সংবাদ
আজকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত বুলেটিনে কোভিড-১৯ কে বিশ্বব্যাপী অতিমারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতালি ,স্পেন, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশগুলিতে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে, বাড়ছে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতে রিপোর্টেড কেসের সংখ্যা। এর জন্য বিভিন্ন দেশ বিশেষ টাস্কফোর্স ও ইম্প্যাক্ট ফোর্স গঠন করছে। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা সতর্কতামূলক বিভিন্ন উপায়গুলির বিধি-নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন।
ড: আশিস খাডসের ডাইরী— এপ্রিল ১৫, ২০২০
সারা দেশ থমকে গেছে। এমন নজির ইতিহাসে নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন । সাধারণ মানুষ ঘরবন্দী। কিন্তু কিছুতেই এই রোগকে বাগে আনা যাচ্ছে না। প্রত্যেকদিন হাসপাতালে বহির্বিভাগ ভরে উঠছে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীতে। এদের মধ্যে কার কোভিড-১৯ আর কার ক্ষেত্রে অন্য কোন রোগের সিম্পটম তা নির্ণয় করার জন্য যে পরীক্ষার প্রয়োজন সেই কিটস্ অত্যন্ত সীমিত। রোগীরা নামমাত্র সর্তকতা অবলম্বন করে ভিড় জমাচ্ছে। আমরা যারা এই চিকিৎসা করার জন্য প্রস্তুত তাদের মধ্যে খুব কম জনের ভাগ্যেই জুটেছে আত্মরক্ষাকারী পোশাক বা মুখোশ। যা পরে আমাদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, তা আত্মরক্ষার পক্ষে খুবই নগণ্য। কিন্তু একথা জেনেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি চিকিৎসা করার। যদিও এর ফলে কতজন চিকিৎসক যে এই রোগে আক্রান্ত হবেন এবং এদের মধ্যে কাকে যে প্রাণঘাতী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে বা মরতে হবে, তা আমরা কেউই জানিনা। ভাগ্য আমাদের সহায় হোক।
বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমের খবর- 'ঘরে পৌঁছুতে চান শ্রমিকেরা' মে ১৬, ২০২০
সংবাদ প্রতিবেদক|| হাইওয়েগুলোয় এখন বাহন চলাচল সীমিত। সীমিত রাস্তাঘাটে ভীড়। কিন্তু এই জাতীয় সড়কের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে খানিকক্ষণ পর পরই দেখতে পাচ্ছি পায়ে হেঁটে চলা নারী-পুরুষ শিশুদের এক একটি দলকে। এরা শ্রমিক, যারা রুটি রুজির সন্ধানে ঘর ছেড়ে অনেক দূরের কোন শহরে এসেছিল। লকডাউনের ফলে কাজ বন্ধ। দৈনন্দিন পারিশ্রামিকও। সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে যেটুকু ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা এতই সামান্য যে বেশিরভাগ মানুষের কপালে কিছু আর জুটছে না। বাড়ি ফেরার কোনো যানবাহনও নেই ।এদের হাতে টাকা পয়সাও নেই। ফলে কাতারে কাতারে মানুষ বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছে ঘরে ফেরার যাত্রায়। অনাহার আর ক্লান্তি অগ্রাহ্য করে, ঠাঠা রোদ মাথায় নিয়ে এরা সকাল থেকে রাত বা কখনো সারারাত ধরে হেঁটে চলেছে। পিঠে জিনিসের বোঝা। কেউ কেউ তাদের শিশুদের বেঁধে নিয়েছে পিঠে বা বসিয়েছে কাঁধে। কবে লকডাউন খুলবে তার কোনো স্থিরতা নেই আর লকডাউন খোলার পরেও এদের হাতে যে কাজ থাকবে তারও কোন ঠিক নেই। এমন একজনের সাক্ষাৎকার শুনুন:
সাংবদিক|| আপনার নাম কি? কোথা থেকে আসছেন? কোথায় ফিরবেন?
শ্রমিক|| আমার নাম কৃপাল। দিল্লিতে আমরা একটা বহুতল বাড়ি তৈরীর কাজের মজুর হিসেবে রাজস্থানের গ্রাম থেকে এসেছি। রাজস্থানের পিপরায় আমাদের গ্রাম। কাজ নেই, পয়সা নেই, খাবারও জুটছে না। কোন যানবাহনও চলছে না। তাই আমরা হেঁটে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছি।
সাংবাদিক|| এখান থেকে আপনাদের গ্রাম কত দূর?
কৃপাল|| তা প্রায় পাঁচ ছ-শো কিলোমিটার হবে।
সাংবদিক|| খাবার পাচ্ছেন রাস্তায়?
কৃপাল|| পয়সা নেই। খাবার কে দেবে? মাঝে এক জায়গায় এক দোকানদার বিনা পয়সায় পাঁউরুটি দিয়েছিল।
সাংবাদিক|| আজ সকাল থেকে কি খেয়েছেন!
কৃপাল|| কিছুই খেতে পাইনি। একটা দোকানের চা চেয়েছিলাম। পয়সা নাই বলে ভাগিয়ে দিয়েছে।
সাংবাদিক|| তাহলে কিভাবে ফিরবেন?
কৃপাল|| জানিনা। কপালে যা আছে তাই হবে।
সুব্রতর ডাইরীর পাতা থেকে— ১ জুন, ২০২০
সত্যিই পুরো মাড়িয়ে দিল। এমন বাম্বু দিল যে সারা পৃথিবী কেলিয়ে গেল। আমাদের হাসপাতালে কোভিড পেশেন্ট নিয়ে যে পরিমাণ প্যানিক তৈরি হয়েছে, তা ভাবা যায়না। অসতর্কভাবে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কোনও পেশেন্টের সংস্পর্শে এলেই স্টাফদের কোয়ারান্টাইন। এতরকম সতর্কতা নিতে গিয়ে চিকিৎসার খরচ যে কোথায় পৌঁছোবে কেউ জানে না। আমাদের তিন জন নার্স ও দুজন ডাক্তার কোভিড আক্রান্ত ,কপাল ভালো খুব একটা কিছু বাড়াবাড়ি হয়নি, এ যাত্রা বেঁচে গেছে। কিন্তু পুরো অর্থনীতি-তো গোল্লায়। চলবে কি করে? হার্ট, ব্রেন, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়ে যাচ্ছে, মানুষ অমর হওয়ার চেষ্টা করছে— আর এক ভাইরাস সংক্রমণেই বুঝিয়ে দিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটা কোথায়। এবার কি ফিরে দেখা হবে ? সংক্রামক মহামারী, অতিমারী তো আর বলে কয়ে আসবে না! এই রোগই এখনো অনেক ভোগাবে। স্বাস্থদপ্তর যাই বলুক। এ রোগের আসল চেহারা সম্পর্কে আমাদের এখনো সম্যক ধারণা নেই। ভাইরাস মিউটেট করবে, তার রকম সকল বদলে যাবে। সেটা ভয়ংকরতর, নাকি দুর্বল –তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
ড:মাইকেল অস্টারহোম, সংক্রামক রোগের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ, সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ড্যান বুয়েটনার, জুন ৬, ২০২০।
ড্যান|| ড: অস্টারহোম, আপনার কি মনে হয় যে এই কোভিড-১৯ ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যাবে? এই সংক্রমণ নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে?
ড: অস্টারহোম|| এই ধরনের ড্রপলেট বাহিত ভাইরাস কে আমাদের মহলে 'leaky bucket virus' বলা হয় কারণ সামান্যতম ছিদ্র পেলেই এই ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে রোগীকে। তাই মনে হয়, যতদিন না জনগণের ৬০-৭০ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, ক্রমে একটা গোষ্ঠীগত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা Herd Immunity গড়ে উঠবে, ততদিন অবধি এই সংক্রমণের প্রকোপ কম হবে না।
ড্যান|| আমরা কি আমাদের সবচেয়ে দুরূহ সময় পেরিয়ে এসেছি? স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় যেমন হয়েছিল, ধীরে ধীরে সংক্রমণ প্রশমিত হয়ে এসেছিল।
ড: অস্টারহোম|| ফ্লু এবং করোনাভাইরাস একই রকম ব্যবহার করবে এটা ভাবা ঠিক নয়। তবে সংক্রামক রোগ ঢেউয়ের মতো ব্যবহার করে। প্রথম ধাক্কার পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে, তারপর আবার নতুন একটা ঢেউ আসে, এভাবে প্রশমিত হয়। এক্ষেত্রেও মনে হয় তাই হবে ।খুব তাড়াতাড়ি এটাকে সামলানো যাবে না ।তাছাড়া
ভাইরাসের মিউটেশন হয় । তাই চরিত্র ও ব্যবহার পাল্টে যায়।
ড্যান|| এর ভ্যাকসিন কত দিনের মধ্যে বেরোবে বলে আপনার মনে হয়?
ড: অস্টারহোম|| খুব তাড়াহুড়ো করে কোন রোগের ভ্যাকসিন বার করা যায় না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেকগুলো পর্যায়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল করতে হয়। তাছাড়া ভ্যাকসিন তৈরি হলেই যে সব সময় জনগণের ওপর তা সফল হবে তা হয়না, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে প্রয়োগ করার পর। কারণ সকলের প্রতিরোধক ক্ষমতা সমান
নয়। ভাইরাসটির নানান ধরন বা strain ক্রমে প্রকাশ পেতে পারে। ভাইরাস মিউটেট করতে পারে। ভ্যাকসিনের এমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় ধরা পড়েনি। তাই ভ্যাকসিন তৈরি করতে সময় লাগে, লাগবেও। আমার অভিজ্ঞতায় অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাসের আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ।
ড্যান|| তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত ?
ড: অস্টারহোম|| প্রথমতঃ আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য , জীবনযাত্রা ,ব্যায়াম এবং নানান সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। স্থুলতা একটি বিশেষ বিষয়— দেখা গেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেসব মানুষ কে ICU তে ভর্তি হতে হয়েছে বা যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই obesity বা স্থুলতার শিকার।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের Physical distancing practice করতে হবে, Social distancing নয়। সকলের সঙ্গে জুড়ে থাকলে ভালো থাকবেন । তবে ভীড়ের জায়গা এড়িয়ে চলুন, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করুন বারবার হাত ধুয়ে ফেলুন সাবান দিয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে। চোখে চশমা পড়ুন ।
তৃতীয়তঃ একে একে অন্যকে সাহায্য করুন– মানসিককভাবে, অর্থনৈতিকভাবে– একসঙ্গে লড়লে লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা বাড়বে ।
লেখাটি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন
এই লেখাটি কোন ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিজম নয়। চীনের কার্যকর্তাদের যে কথোপকথন এখানে লিখেছি সেগুলো কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু ভিত্তিহীন নয়। ডাক্তারি সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক। তবে এগুলোর ইন্টারপ্রিটেশন আমার প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারি জ্ঞান অনুযায়ী। এ সম্পর্কে ভিন্নমতও থাকতে পারে। যেখানে কথোপকথন বা ডাইরী বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় লিখিত হয়েছে সেখানে একটি অনুবাদের ধাঁচ বা সুর রাখতে চেয়েছি সচেতনভাবেই— তা একটু আড়ষ্ট। টাইমলাইন মোটামুটি ঠিকঠাক, কিন্তু একদম সঠিক সবক্ষেত্রে নাও হতে পারে— দু'চারদিনের এদিক ওদিকের সম্ভাবনা আছে।
খুব ভালো লাগল। উপস্থাপনাগুণ সমৃদ্ধ। ঘোষণা, কাল্পনিক কথোপকথন (বাস্তবকে ভিত্তি করে), মিডিয়ার অডিয়ো-ভিডিও, ডাইরির পাতা, সাক্ষাৎকার ইত্যাদির অবলম্বনে গোটা বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতিকে তুলে ধরার কাজটি করা হয়েছে অনেকটা অনায়াস ভঙ্গিতে। আবার সামনের দিনের ভাববার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। ভালো। খুব ভালো থেকো কৌশিক।
ReplyDeletePost a Comment