অসমের বঙাইগাঁও নিবাসী এনাক্ষী গোস্বামী বাংলা গদ্যে নিজস্বতা নিয়ে এসেছেন। তাঁর গ্রন্থ ‘গন্তব্য হৃদয়পুর’ পাঠকের কাছে সমাদৃত। গভীর বিষয়কে উইটের স্বাদে পরিবেশন করতে তিনি সিদ্ধহস্ত।

বাণিজ‍্য বসতে...

এণাক্ষী গোস্বামী

 

নারীর পরিচয়, সে লক্ষ্মী। ভরন্ত সংসার, ফলবতী, সুখী গৃহকোণ শোভে গ্রামাফোন— ইহাই নারীর প্রকৃত রূপ। আমি কিঞ্চিৎ অলক্ষ্মী। আমার গৃহে কুলুঙ্গিতে লক্ষ্মীর পট নাই, সন্ধ‍্যের শঙ্খ, অথবা প্রদীপ অনুপস্থিত। ধূনার ধোঁয়া শুধুই বর্ষার পূতিগন্ধ দূর করে। 

বস্তুতঃ আমি লক্ষ্মীকে আঁচলে বাঁধিবার পরিবর্তে সিন্দুকে রাখিতেই পছন্দ করি, সর্বজনস্বীকৃত সুরক্ষিত স্থল। যাহাতে একখানি ভদ্র চাকুরী জুটে, সেরকম বিদ‍্যাবুদ্ধি আমাকে ভগবান দেন নাই। সেই কারণে আমার চিরকাল ব‍্যবসা করিবার ইচ্ছা। নিজ মধ‍্যে আর সিন্দুক মধ‍্যে লক্ষ্মীকে আমার আপন করিয়া রাখিতেই হইবে। ছাপোষা নারীর এ শখ দুর্মর বটে, তবু হৃদয়ের কোন সংগোপনে আশামুকুল বারংবার ঝরিয়া গিয়াও পুনরায় নতুন রূপে ফুটিতে থাকে, তাহার রহস‍্যভেদ কোন সত‍্যান্বেষীর পক্ষেও সম্ভব নহে। নারীরূপের এই চেনা গন্ডির বাহিরে যিনিই পা রাখিয়াছেন, তাঁহাকেই অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। এ কথা আমি কহিতেছি না, মহাকাব্যে অবধি এর দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। এন্ত্রেপ্রনর সম্মান অর্জন করিতে তাহাদের বেশীরভাগেরই মরিচকেশ, লবণ-মরিচ এবং ক্রমে ক্রমে শুধুই লবণাক্ত হইয়াছে। তথাপি আমার এন্ত্রেপ্রনর হইবার ইচ্ছা।  

বহুবিধ ব‍্যবসার ভাবনা আমার মস্তিষ্কে উদ্ভুত হয়। লক্ষ‍্য করিয়াছি, অপরকে রাঁধিয়া খাওয়াইবার উপরে আমার লোভ সাংঘাতিক। বোধ করি নারীদেহের এই ললিত গুণখানি মঙ্গলময় আমা হইতে হরণ করিতে পারে নাই। ভাবিয়া ছিলাম প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছাইয়া পুত্রবধূর খুঁত ধরিবার পরিবর্তে স্বীয় রাঁধিবার হাতটির প্রশংসা পরজনের মুখে শুনিব। বাঙ্গালার হারিয়ে যাওয়া রান্না আমার হাতের স্পর্শে আবার পৌঁছিবে মানুষের রসনায়। যদি সে সফর লম্বা করিতে পারি তবে, রসনা হইতে হৃদয়ে পৌঁছিতেও বিলম্ব হইবার কথা নহে। এতদিন শুক্তুনি, অম্বল, প্রভৃতি রাঁধিতে রাঁধিতে আপনজনের মুখে যে খুশীর রোশনাইয়ের অনুপস্থিতি দেখিয়া প্রত‍্যহ নিজেকে ঘষামাজা করিয়াছি, 'আরও ভালো করতে হবে' এই ধারণা ধারণ করিয়াছি— সেই মহারণ ক্ষান্ত হইবে। একখানি ছোট মৃণ্ময় কুটিরে নিজের ব‍্যবসাখানি। আধুনিক চেয়ার-টেবিলের স্হলে সেখানে থাকিবে টানা সারির বেঞ্চ পাতা। পঙক্তি ভোজের ধারণা ফ্ল‍্যাটবাড়ি সম্বলিত পৃথিবীতে রূপকথা হইয়াই যাইবে অচিরেই। একসাথে হৈ হৈ করিয়া খাইয়া তৃপ্ত মুখগুলি দেখিয়া আমি ফিরিয়া পাব পুরাতন দিন। তাহার নাম রাখিব 'পাঁচমেশালী।' 

চিত্র সৌজন‍্যে গুগুল

নতুবা ধাবা খুলিব কোনো। কালো মুগ ডেচকিতে ফুটিবে ভুরভুর শব্দে, ভুট্টার রুটিতে মূলা কুড়িয়া দিব। উহাতে রুটির গঠন মজবুত হয়। দিনশেষে অবশিষ্ট খাবার বিলাইয়া দিব গরীবদের মধ‍্যে। তাহার পর বুঝিয়াছি এসব ব‍্যবসা আমার দ্বারা হইবে না। রোজ কত মাছ আনিব তাহার হিসাব করিতে আমার আঙ্গুলের কড় কম পড়িয়া যাইবে। মাসিক আটার হিসেব যে খাতায় লিখিয়া রাখিব, বৃষ্টিদিনে সেসব ভিজিয়া গেলে লোকসান হইবে বিস্তর। হয় আমার নয়ত দোকানীর। এইপ্রকারেই ব‍্যবসার পথ আমার জন‍্য বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কখনও নিজে পিছাইয়া আসিয়াছি কঠিন গাণিতিক প‍্যাঁচপয়জার দেখিয়া, কখনও বা পাশের মানুষের বক্রোক্তির ভয়ে। মোটকথা, ব‍্যবসা করা আমার হয়ে ওঠে নাই। অথচ আমি যে লাভবান হইতেই চাই এমনটা নহে। ব‍্যবসায় লোকসান যে ষোলোআনা হয় সে জ্ঞান আমার আছে। তবুও বারংবার ব‍্যবসার দিকে ধাবণের কারণ স্পষ্ট হয়না। নিজেকে অপ্রকৃতিস্থ জ্ঞাত করিয়া মনস্তাত্ত্বিকের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলাম বার কয়েক। চারিদিক দেখিয়া শুনিয়া খানকতক সিডেটিভ লিখিয়া তিনি বলিয়া ছিলেন, "নিজেকে এনগেজ করুন এমন কোন কাজে যাতে নামধাম হয়, আপনার আসলে স্বীকৃতি দরকার।" আমার নামধাম হয় নাই, বাড়ি আসিয়া প্রেসক্রিপশনখানাকে পুড়াইয়া স্বস্তি পাইয়াছিলাম, অন্ততঃ বাতুল নাম ঘুচিবে। 

এই ঊনিশ-বিশ ভাবনায় আমার ছাপোষা গৃহীজীবন অতিবাহিত হইতে লাগিল।  ভারতবর্ষের অন‍্য পাঁঁচটি সাধারণ নারীর যেমন হয়। বাজারে গিয়া শশাওয়ালাকে ধমকাইয়া ভাবিতে লাগিলাম, শশার ব‍্যবসা করিলে আগে সমস্ত শশা চাখিয়া,পরীক্ষা করিয়া, তবে বেচিতে বসিব। খরিদ্দারকে তেতো-ঝুনো গছাইব না। এইভাবেই ছেঁচকি রাঁধিতে রাঁধিতে, ছেলে ঠ‍্যাঙাইতে ঠ‍্যাঙাইতে, নিত‍্যনূতন ব‍্যবসার মতলব আঁটিতে আঁটিতে যখন দিন গুজরান হইতেছে তখন দেশে আসিল কোভিড-১৯। সরকার বাহাদুর অবধি 'জয়শ্রীআম' বলিয়া অলিন্দের অন্দরে সেঁদাইলেন। নাগরিক জীবন পুরোপুরি পর্যুদস্ত হইল। গৃহকর্ম সহায়িকার আচমকা অনুপস্থিতিতে কার্য খানিক বৃদ্ধি পেল বটে, তবু স্বামীর অফিস আর সন্তানের বিদ‍্যালয়ের প্রভাতী উপদ্রব হইতে পরিত্রাণ পাওয়া গেল খানিক। ভাবিবার পথ হইল প্রশস্ত। 

চিত্র সৌজন‍্যে গুগুল

আন্তর্জালের মাধ‍্যমে দুনিয়ার খবর পাই। হিরোশিমার জ‍্যাকব হনলুলুর অ্যানাকে বিবাহ-প্রস্তাব দিয়াছে, মারী ঘুচিলেই তাহারা চার্চে গিয়া ওথ লইবে। অ্যানা বলিয়াছে ব্রাইড মেটসরা সুবর্ণ নির্মিত নির্মিত মাস্ক পরিবে। আমাদিগের হায়দ্রাবাদের একজন স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী সুবর্ণ মাস্ক বানাইয়াছেন। সংবাদে এ খবর চাউর হইতেই অ্যানা তাঁঁহার নামে কোর্টে মামলা ঠুঁকিবে বলিয়া শাসাইয়াছে, অভিযোগ গুরুতর: "আইডিয়া চুরি"। কর্ণগোচর হইল, করোনা-উত্তর কালে লিপস্টিক ব‍্যবসায়ীদের ঘোরতর বিপদ আসন্ন। মাস্কে মুখ লুকাইবার কারণে রমণীরা ওষ্ঠরঞ্জনের প্রয়োজন অনুভব করিতেছেন না। লিপস্টিক ব‍্যবসায়ীরা ট্রাকে করিয়া লিপস্টিক লইয়া যাইয়া কালাহান্ডি কিম্বা কাজলগাঁওয়ে ফেলিয়া দিতেছেন। সেখানকার ভুখমাঙ্গা মানুষগুলো খাবার জ্ঞান করিয়া উহাতে কামড় বসাইয়া ডাইরিয়ায় ভুগিতেছে। ভারতবর্ষে প্রতিবাদ এই রূপই হয় বটে। ভুট্টা, আখ, আলু সমস্ত চাষীরা অতীতে ফসলের পর্যাপ্ত মূল‍্য না পাইয়া প্রতিবাদের যে ভাষার জন্ম দিয়াছিলেন এক্ষণে শিমলা মরিচ (সঙ্গে লিঙ্ক) এবং লিপস্টিকও সেই পথে ধাবমান হইতেছে। একদিন প্রাতে কেহ নতুন একটি পথ আবিস্কার করেন, তাহার পর প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই পথ ধরিয়াই ধাবমান হইতে থাকে। পরীক্ষা-পরীক্ষনকে ইহারা শিক্ষনীয় বিষয়ের তালিকা হইতে বাদ দিয়াছে।

https://m.timesofindia.com/city/chandigarh/punjab-capsicum-mushroom-farmers-hit-rough-patch/articleshow/75445284.cms 

কোভিড-কালে কত কী নূতন শুনিলাম। বস্তুত সবই নবীন, পুরাতন কিছু নাই। আইসোলেশন শুনিয়া ভারতীয়রা এমত ব‍্যবহার করিতেছে, যেন ইহাদের ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষের কেহ কখনও জল বসন্ত গুটি বসন্ত অথবা হাম নামক রোগের নাম শোনে নাহি। সরকার যত বলেন, অন্দরে থাক, ইহারা প্রবল বিক্রমে প্রাণে খুশীর তুফান তুলিয়া বাহিরে ধাবমান হইতে থাকে। রোগ কমিবার পরিবর্তে বাড়িয়া যায়। ঔষধের দোকানীরা যে এমত অবস্থায় দু'হাত্তা কামাইবেন, সরকার কার্ফু জারী করাইয়া সে পথ বন্ধ করিয়া দেন। ব‍্যবসা লাটে উঠে।  

চিত্র সৌজন‍্যে গুগুল

মদীয় দুঃখী দেশে ব‍্যবসা লইয়া বিভিন্ন মত প্রচারিত। অঞ্চলভেদে ইহার প্রভাব মারাত্মক। বাঙ্গালীদিগের ধারণা যাহারা ব‍্যবসা করে, তাহারা অশিক্ষিত বর্বর সর্বোপরি বুর্জোয়া। চাকুরী, একমাত্র চাকুরী করিলেই সমাজের বেশ মাথা হইয়া বসা যায়। মাস-মাহিনা শব্দটি ইহাদের কাছে বড় শ্লাঘার বিষয়। অন‍্যদিকে অবশিষ্ট ভারতে ব‍্যবসা বড়ই আপনার। গুজরাত, রাজস্থান,মুম্বাইয়ে ইহাই রুটিরুজি। ইহারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরিয়া পিতৃ-প্রপিতামহের ব‍্যবসার সর্বাঙ্গীন উন্নতি করিতে প্রস্তুত‌। করোনাকালে এই বুর্জোয়া এবং মধ‍্যবিত্ত উভয়েই গৃহে অন্তরীন থাকিয়া অন্তর্জালে একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানাইতে লাগিল। এদেশে অস্ত্র খাদ‍্যের চাইতেও সুলভ। এই দীর্ঘ পুরাতন সভ‍্যতা যদি কোনদিন অবলুপ্ত হয়, আগামী প্রজন্ম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালাইয়া "ইহারা সকলেই রণোন্মোত্ত যোদ্ধা ছিলেন" এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইবে। 

অবসর অনেক। আমি ভাবিতে লাগিলাম। এ দুর্দিনে কিছু বিক্রয় করিতে না পারিলে এ করোনাকাল বৃথা। পূর্বে কিছুদিন ইনস‍্যু্রেন্সে কর্মরত ছিলাম। গ্রাহককে হিসাব নিকাশ করিয়া দেখাইয়া দিতাম, "মশাই এই হল আপনার রিস্ক পুল, লাইফ ভ‍্যালু এই, আর আপনার ব‍্যাঙ্কে আছে এই। টেঁসে গেলে বাড়ির লোকের হাতে বাটি।" প্রথম প্রথম তেমন সাফল‍্য আসে নাই। পরবর্তীতে আধআনা হিসেবের সহিত, দেড়আনা ভয়েস মড‍্যুলেশন আর দুইআনা ভয় মিশাইয়া দেখিয়াছিলাম, বেশ কাজ হয়। অপরদিকের মানুষটি রিস্ক পুল, লাইফ ভ‍্যালু, অ্যানুইটি ইত‍্যাদি শব্দ শুনিয়া প্রথমটা কলে পড়া জন্তুর ন‍্যায় ছটফটাইতে থাকে, তাহার পরে সারেন্ডারপত্রে একখানি ছোট্ট সহি দিয়া আমার প্রমোশনের ব‍্যবস্থা করিয়া দেয়। প্রিমিয়ামের চেক হাতে লইয়া পরদিন অফিসের সবাইকে আমি স্বীয় পয়সায় চা খাওয়াই। চতুর্দিক ভাবিয়া সিদ্ধান্ত নিলাম, একেবারে আনকোরা নূতন ব‍্যবসায় না গিয়া বরং পুরাতন ছুরিতে শান দিয়া দেখা যাক!

বহুদিন অব‍্যবহারে কাঁচিতে জং পড়িয়াছে কিনা জানা প্রয়োজন। প্রথমেই ধরিলাম প্রতিবেশী বৌদিদিকে। বিভিন্ন সাইটের নাম, এবং নিজের কল্পনার রঙ মিশাইয়া তথ‍্য পরিবেশন করিলাম, "ভারত মৃত‍্যুতে ইতালী, স্পেন, ইউএসএ সবাইকে ছাপিয়ে যাবে।" জানালা দিয়া আলুরদম, আর আলুভাজা চালান করিতে করিতে জল্পনা চলিল জোর। ফল বুঝিতে পারিলাম সপ্তম দিবসে। যখন বৌদিদিটি মাসকাবারি চাউল কিনিয়া আনিয়া তাহা বৈশাখের রৌদ্রে ছাতে শুকাইতে লাগিল তখন আমি ভারী আত্মপ্রসাদ লাভ করিলাম। তাহারপর মোড়ের মুদির দোকান, বাজারের সব্জিবিক্রেতা ইহারা একে একে আমার গিনিপিগ হইয়া উঠিল। তবে তৃপ্তির এখনও কিছু বাকি ছিল। ফেসবুক নামক একখানি বাজার পৃথিবী জুড়ে অবস্থান করিতেছে। সমস্তই উন্মুক্ত, দেওয়াল ছাতকে ইহারা প্রয়োজনের তালিকা হইতে বাদ দিয়াছে। শুধু অল্প প‍্যাকেজিং আর তুখোড় মার্কেটিং স্ট‍্রাটেজি, ইহা থাকিলেই আপনি এস্হলে ব‍্যাঘ্র-দুগ্ধ বিক্রয় করিতে পারিবেন। আমি ক্ষেত্রে খানিক বীজ ছড়াইলাম। কিয়ৎ অঙ্কুর সমূলেই বিনষ্ট হইল, দু'টি-একটি তরু হনুমান গলাধঃকরণ করিল, আমি পুর্ণ উদ‍্যমে নতুন গাছ লাগাইয়া চলিলাম। রোজ নতুন সংখ‍্যার কারসাজি। পরিসংখ‍্যান। ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ যে করোনাক্রান্ত হইবেই, এবং ইহাদের যে একমাত্র নিয়তি মৃত‍্যু তাহা প্রমাণ করিয়াই ছাড়িব। লাইক বাড়িতে লাগিল ক্রমশ, ধীরলয়ে শেয়ারও। একশ, হাজার, লক্ষ, কোটি, অর্বুদ...

মানুষ বুভুক্ষুর মত করিতে লাগিল আমার খবরের জন‍্য। তাহার পরবর্তীতে বুঝিলাম শুধু করোনা নিয়ে পড়িয়া থাকিলে হইবেনা, সময়ের স্রোতে গা-ভাসানো আশুকাজ। ভারতবর্ষ প্রত‍্যহ আমার টপিক জুটাইতে লাগিল। আমফান, পঙ্গপাল, ভূমিকম্প, বন‍্যা...! পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে করা আমার খবরটি যেদিন ৩.৫ কে শেয়ার হয়েছিল, সেদিন জামাইষষ্ঠীতে আমার বাড়িতে বারোপদ রান্না হইয়াছিল। 

চিত্র সৌজন‍্যে গুগুল

ভয় আর সহানুভূতি দিয়া যে গোটা একটি ব‍্যবসা চালনা করা যায়, করোনা কাল আমাকে শিখাইয়া দিয়াছে। ভাবিতেছি, ভবিষ‍্যতে এই ব‍্যবসাই করিব। মূলধন লাগেনা, জমা খরচের হিসাব লাগেনা। এমনিতেই পৃথিবীতে ভারতবাসীর ন‍্যায় আবেগপ্রবণ জাতি আর কেহ নাই। শুধু তাহাতে একটুখানি কাতুকুতু প্রয়োজন। সরকার পক্ষ, সরকার বিপক্ষ, নিরপেক্ষ, সাপেক্ষ— সকলেই ব‍্যবসা জমাইতে পারে। ব‍্যবসা মন্দ হইবে না। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন গর্ভিনী হস্তির হত‍্যা নিয়া একখানি সহানুভূতি পোস্ট ফেসবুকে দিয়া আসিয়াছি। এবার রান্না করিতে হইবে, গতকাল কাছিম পাইয়াছিলাম, আমার আবাসনের ওয়াচম‍্যানটি এর আগে বগারী, তিতির প্রভৃতি মারিয়া জুটাইয়া দিয়াছে। আজিকে সেরার সেরা। কাছিমের পেটে ডিম থাকিলেও থাকিতে পারে। মধ‍্যাহ্নভোজ জমিয়া যাইবে। ততক্ষণে পোস্ট শেয়ার হোক। 

চিত্র সৌজন‍্যে গুগুল

তবে  বিজনেস আইডিয়া চুরি যাইবার একটা ভীতি সবসময়েই রহিয়া যায় সবক্ষেত্রেই। ততদিনে অ্যানা অথবা হায়দ্রাবাদি ব‍্যবসায়ী কেহ না কেহ জিতিয়া যাইবে। যিনি হারিবেন জনগণের সিমপ‍্যাথিতে তিনি বড়লোক হইয়া উঠিবেন, সে বিশ্বাস আমার আছে। আমরাই করুণাদ্রেক করিয়া রাণুদিকে আনিয়াছিলাম। স্বীকৃতি দিবার জন‍্য ভারতবাসী বড় উদগ্রীব।

আশারাখি ভবিষ্যতে ব‍্যবসার এন্ত্রেপ্রনর হইতে পারিব। আজিকে এখানেই সমাপ্ত। শুভমস্তু। 

।। শুভমস্তু।।


Post a Comment from facebook

1 Comments

  1. খুব ভালো লেখা হইয়াছে। অসাধারণ বলিলেও, কিঞ্চিত কম পড়িতেছে, লক্ষ করিলাম। একজন গৃহকর্মী হিসেবে, যে বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে, তাহা সমুচিত। আর প্রতিবেদনটি পেশ করিবার জন্য যে ভাষাটিকে ব্যবহার করা হইয়াছে, তাহা উপাদেয়, যেন একটি চেনা ব্যঞ্জনকেই অপূর্ব স্বাদে পরিবেশন করা হইয়াছে। বড়ো আহ্লাদের বিষয়। সাধারণের সঙ্গে যে সাহিত্যগুণ জড়াইয়াছে, তাহা অত্যন্ত শ্লাঘার। ভালো থাকিবেন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post