কাজ না পেলে তো যেতেই
হবে
আনুয়ার মন্ডল
আমি আনুয়ার মন্ডল। আমার গ্রাম, মুর্শিদাবাদ জেলার দৌলতাবাদ থানার ঘোষপাড়া, নওদাপাড়া।
এখন আমি বিগত তিনদিন ধরে গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টিনে আছি। গিয়েছিলাম কেরালায়। কেরালার মামরা নামে একটি জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতাম। এ রাজ্যে আয় তেমন না থাকায় ভিনরাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ রাজ্যে যেখানে দৈনিক তিন-চারশো টাকা মজুরি, কেরালায় একই কাজ করে সাতশো টাকা পেতাম। ফলে খরচ-খরচা বাদেও কিছু টাকা জমানো যেত। বেশ চলছিলো, সামনে ঈদ, ভেবেছিলাম ঈদের আগেই বাড়ি ফিরব।
করোনা পরিস্থিতিতে
হঠাৎ করে লকডাউন আমাদের এক ভয়ঙ্কর অবস্থায় ফেলে দিল। প্রথম দিকে নিজেদের চাল ডাল যা ছিল তা দিয়ে কিছু দিন চলল, তারপর আর কিছু পাই
না, সবই তো বন্ধ। ওখানে কিছু লোকজনের সহায়তায় সরকারি সাহায্য পাই, চাল, ডাল এইসব।
তাছাড়া স্থানীয় লোকজনও খুব সাহায্য করেছে । খাবার পৌঁছে দিত, যাতে অসুবিধায় না পড়ি
সেজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে ওই ক'মাসের ঘরভাড়া মুকুব করে দিয়েছিল।
যখন করোনা, লকডাউন
এই কথাগুলো শুনি তখন ভেবেছিলাম আমাদের মত মানুষদের নিজের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু
আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও তা যখন হল না তখন খুব অসহায় লাগছিল, মনে হয়েছিল কে দেখবে কী
হবে আমাদের, এদিকে কাজ বন্ধ,আয় নেই, বাইরেও যেতে পারছি না। সাহায্য পেলেও, মন শুধু চাইত
কবে বাড়ি ফিরে আসতে পারব। বাড়িতে ফোন করে এখানকার
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন পারমিশন করিয়ে দিতে পারবেন, কিন্তু
ভাড়া নিজেকেই দিতে হবে। তখন টাকার দিকে না তাকিয়ে আমরা নিজেরাই আসার ব্যবস্থা করলাম।
ফেসবুক এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে আমরা আঠাশ জন একটি বাস ভাড়া করি। প্রত্যেককে প্রায় সাড়ে
আট হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়েছে। আসার পথে
প্রতি রাজ্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। তিন দিন হল আমরা নিজের গ্ৰামে পা দিয়েছি। এরকম
হওয়ায় আর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকবে না, কিন্তু করোনা মুক্ত হয়ে গেলে হয়তো সংসারের কথা
ভেবে আবারও যেতে হতে পারে। কি করব কাজ না পেলে তো যেতেই হবে!
অনুলিখন: টিম রেহেল [২৮মে, ২০২০]
টিম রেহেল-কে অভিনন্দন ও ভালোবাসা, এঁদের ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে ছোট্টোর মধ্যে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরার জন্য। আমি তো ঘরে বসে। এঁদের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষতা ছিল না। ঘটিয়ে দিল রেহেল।
ReplyDeletePost a Comment