পেশায় ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসায়ী যখন গল্প-উপন্যাস লেখেন তখন তা প্রচলের বাইরে এক অবস্থান নেয়। অত্যন্ত শক্তিশালী কলম। প্রতিবন্ধকতার মধ্যে লড়াইয়ে উজ্জীবীত।

ব্যবসা একটি করোনাক্রান্তিক বিবাস্তবতা
সৌগত বালী


চৌবাচ্চার জল স্যানিটাইজার হয়ে যাবে একদিন । ভেবে এখন আর কোনো স্নান নেই আমাদের লিম্ফোমা বিকেলে ।। আকাশে ওহ না না না বাতাসই হবে বা গুঁড়ো গুঁড়ো মিহি চিঁহি ডাকছিল সে ।।। বৌ বলল হ্যান্ড ওয়াশ ।।। আমাদিগের লুব্রিকেটিং তেলের ভাণ্ডার শেষ হয়ে আসছে ।।। কলকব্জা বিকল হয়ে যায় যে ।। আমি উত্তর করি না ।। ১৭ ই মার্চ এক বস্তা চাল এক টিন তেল কিনে রেখেছিলাম ।। ভেবেছিলাম আমরা কএকমাস চালিয়ে নিতে পারব ।। ভেবেছিলাম আমরা খুব চালাক ।। অনেকে যখন খাদ্যাভাবে ধুঁকবে আমরা ঠিক লুকিয়ে ভাত চাপাব ।।। বৌ এয়ার টাইট রান্নাঘর ঘ্রাণ চেপে রেখে দেবে ।।। আমাদের প্রতিবেশীদের মৃত্যু ।।। কী সব লাভবান গল্প । বৌটি হাসে । ভেতরে ভেতরে আমরা সবাই একটা স্বার্থের কোমরবিডিটি বয়ে বেড়াচ্ছি ।। এখন সূর্যটা মেগালম্যানিয়াক নেমে যাচ্ছে পেছনে । আমরা ছাদে বসে হাওয়া খাই ।।। আমাদের নিকটস্থ রেললাইনে পরিযায়ীরা সিগনালে আটকে থেমে থাকার মধ্যে রলরোল নেমে যাচ্ছে ট্রেসলেস ।।

আমাদের ঘনিষ্ট বাড়িগুলি থেকে কান্না ভেসে আসে ঘনক রাতের দিকে ।। আমার বৌ শুনে ভাঁড়ার ঘরে দেখে আসে আর সামান্য রসদ । ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ।। জমানো টাকা ।। বৌ বলল কোনো এক রাতে আমরা বরং অন্নপূর্ণার হাঁড়ির দখল নিতে পারি ।। রক্তারক্তি হবে । আমাদের বাচ্চারা মরে যাবে হয়তো ।।। তবুতো আমরা বেঁচে থাকব আমাদের বেঁচে থাকাটা জরুরি ।। বেঁচে থাকলে আমরা আবার সেক্স করব ।। আবার বাচ্চা জন্মাবে ।।। আমি অনেকরাতে উঠে আমার বাচ্চাদের ডেকে দেখি এসব যুদ্ধের পর তারা টিকে আছে কিনা কিম্বা আমার পাশের ঘরের মা ।। এই চিঁহি ডাকা বাতাস যদি একবার তাকে খেয়ে নিতে পারে তাহলে পেনশনের সামান্য খড় ভেসে যাবে ।।। মার্চ পেরিয়ে এপ্রিলের দিকে যাচ্ছে ঘড়িটা ।।।

এই মাস্ক কি বাক পরাধীনতার রূপক ? নাকি আমরা শালা গোমাতা ।। আমাদের প্রাপ্যতার মুখ কি বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ।।। কে সেই রাখাল বালক রাষ্ট্র ! ! ! যে নাকি আমাদের অনির্দিষ্ট দরজায় তালা মেরে কোটি মানুষের চাকরি খাবে । বারো ঘণ্টার ডিউটি হেঁকে দেবে । ফাইব জি লঞ্চ এর ফাঁদ পাতবে । নাকি এ রাজ্য যে কেবলি মরা লুকিয়ে ফেলবে তার স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেতর ।। তার ঝুলে যাওয়া চামড়ার মধ্যে একটা হাইপার ট্রাইকসিসের গন্ধ তাই না ।। আজ পাড়ার মোড়ে একজন বুদ্ধিজীবী বলছিল বুঝলে ।। বৌটি প্রত্যুত্তর করে নি নতুবা এখন রাত ।। ইদানিং দিনরাতের চক্কর আমি আর বুঝতে পারি না ।।। সময় যেন একটা প্যাথলিজিক্যাল মিত্থুক ।।

এ পর্যন্ত রাত একটা লিথিয়াম ব্যাটারির এনার্জি দখল করছে ।।। আমাদের পাড়ায় যতসামান্য আড্ডা ।।। আমি এখনো সিগারেট খাই ।। আমার বন্ধুরা আড়চোখে দেখে থাকে কেননা ওরা তো বিড়িতে নেমে এসে দেখাচ্ছে যেন কতো অনাহার লুকিয়ে রাখছে ।। ওরাও ভাবছে এভাবে ওদের জমানো টাকার রসদ লুকিয়ে ফেলব প্রতিবেশীর মৃত্যু ।। এপ্রিল কেটে যাচ্ছে লোভনীয় আপেলের স্বাদ ।।। চিবতে চিবতে এসিডিটি আসে ও ভোর রাতে পেট ফুলে যায় ।।। এই কারাযন্ত্রণা । আমাদের বিশ্বাস নেই নাভিশ্বাস আছে ।। বৌ পাশ ফিরে একটা দীর্ঘ প্রলম্বিত বাতাস ছেড়ে বলে ইদানিং আর শ্বাসের সমস্যা নেই ।। ভারতের পেল্লায় শহরগুলোয় শেয়াল । হায়না বেরিয়ে আসছে ।।। আমাদের শহরেও অনেক হায়না আছে ওদের রেশন দোকানের কাছাকাছি দেখা গেছে ।।। আমাদের তো হায়নার সাথে দোস্তি নেই অতএব চাল ডাল ও কেজিটাক আলু কি ! ! !

আমি দুপুরে দুমুঠো মেখে খেতে খেতে ভাবছিলাম । আমাদের ফেসবুকের কিছু বন্ধু ক্ষিদের অকপট বলতে পেরে বাড়িতে রিলিফের চাল ও এই কয়েক মাসের খাবারের সাপ্লাই কানেকশন কিচেন পর্যন্ত এনে ফেলেছে ।।। রাতে হায়নারা দল বেঁধে সাপ্লাই লাইন চালু করে দেয় ।। ওদের বাড়িতে কিচেনের কল দিয়ে চাল পড়তে থাকে দৈনিক ।।। আমি পরদিন সকালে উঠে প্লাম্বিং এর কাজ যেন কত জানি । মেরামতি চলতে চলতে দুপুর গড়িয়ে যায় ।। বৌ ভাত বেড়ে ডাক দেয় ।।। আসলে এ এক ভ্রম । নিম্ন মধ্যবিত্ত ভেবে গেছি চিরকাল ।। এ এক পুরুষানুক্রম ।। আমরা বংশ পরম্পরায় প্লাম্বিং শিখে উঠতে পারলাম কৈ ।।

অমিতাভ প্রহরাজ একদিন একটা সিনেমার লিঙ্ক ছাড়ল তখন মে মাস ।। ইতিমধ্যে বর্ষেনজিৎ মজুমদার ফেসবুকে টানা ব্যাখা করে বলেছেন কীভাবে এই আশ্চর্য ভাইরাসটি বানানো নয় :
এই COV ২ ভাইরাস টি ম্যান মেড নয় প্রাকৃতিক বিবর্তনে মিউটেসন হতে হতে সৃষ্টি তার সপক্ষে কিছু Hard Data দেখাতে চাই। সম্প্রতি Nature Medicine নামক বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত এই hard data । Nature Medicine জার্নাল টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন বা আপনার চেনা কোনো বায়োমেডিক্যাল সাইন্স এ কর্মরত বিজ্ঞানী বা চিকিৎসা বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন ।।

নিচের ছবিটিতে মানুষ , বাদুড় এবং প্যাংগোলিনের মধ্যে পাওয়া বিভিন্ন করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অভূতপূর্ব গঠন সাদৃশ্য। এবার দেখুন এই স্পাইক প্রোটিনের যে জায়গাটা দেহকোষের ACE 2 নামের গ্রাহক প্রোটিন এ সংযোগ হয় সেই জায়গাটারও অ্যামিনো এসিডের কঠোর সংরক্ষন। অনবরত মিউটেশন করে করে করোনা ভাইরাস নিজেই চেষ্টা করে চলেছে কি ভাবে সে অত্যন্ত পারদর্শিতার সাথে ACE 2 নামক গ্রাহক প্রোটিনের তালা টা পারদর্শিতার সাথে খুলে ফেলতে পারে , বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে হতে।এই তথ্য অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমান যে COV 2 র থেকে খুব অল্প কয়েকটি পরিবর্তিত অ্যামিনো অ্যাসিড দূরত্বেই করোনা ভাইরাস আগে থেকেই প্রকৃতিতে ছিলো কেউ ইচ্ছে করে অন্য কোনো দেশ বা মানব সভ্যতা ধ্বংস করার জন্য এই ভাইরাস বানাইনি। দেখে নিন Nature Medicine Journal এ কি কথা লেখা আছে "This is a Strong Evidence that SARS-COV2 is not the product of purposeful manipulation”.

আমার বৌ দীর্ঘ বকর বকর শুনতে শুনতে ঘুমে গেল ।। আমিও সন্দিহান ভেবে দেখি আমাদের ব্যবসা সংক্রান্ত মেটাফর গুলো ।।। আমাদের রিজেনারেট মেমব্রেন গুলো শুকিয়ে উঠছে বা দোকান ভাড়ার মিটার বাড়তে বাড়তে কিলোমিটারের দিকে চলে যাচ্ছে ও আমাদের দুটিমাত্র এমপ্লয়িদের কীভাবে মাস খানেকের টাকা আটকে দেব ।। এভাবে কখনো মৃত্যুভয় জুন মাসের মতো ।।।

ও দিকে লকডাউন আলগা হচ্ছে তবু রেল লাইনে বসে সিগারেট খাই ।। এতো নির্জন চারপাশ হার্ড ডাটা রস কষ নেই অমিতাভ র সিনেমার লিঙ্কটা ঢুকে যাচ্ছে ।। মৃত্যু যেন জিপ থেকে ছেড়ে এন্কাউনটার করে দেয় ।। টলমল আলো অথবা মৃত্যু টালমাটাল বাতিস্তম্ভের নক্ষত্র নড়ে যায় ও কিছু আগে তারা সস্ত্রীক ফিরছিল এভাবে আরো আরো


 

আমাদের থিয়ামেন বা ইমিউনিটি/
একটা জিঙ্ক এর লোভে হাত থেকে চাল পড়ে যায়/
একটা দীর্ঘ পাওয়ার কাট বা ঝড় /
জানলার সুপার্ব থেকে পড়তে থাকে /
আমাদের কুড়িয়ে আনা বেড়ালের /
যেন মেগাডার্মা বলের মেয়েরা/
ফাঁকা রাস্তা কর্পূর হবে জঙ্গল /
ফাঁকা আস্থা ভর্পুর কবে দঙ্গল/

আঁকা

রাস্তা

দুপুর


আনলক ওয়ান শুরু হচ্ছে ।
আমরা রেডি ।।
বৌ বলল এসো অভিষেক করি তোমার একদিন না একদিন ডানা গজাবে ।। তুমি গাঢ় রাতে ফিরে বলবে তুমি বলবে তুমি আজরাইল *** একটা ফলেন এঞ্জেল ।।। আ মেসেঞ্জার অফ ডেথ ।।। তুমি হাসতে থাকবে ।। ডাক্তার বলবে আসিম্টমেটিক । লক্ষণ ছিল না ।।। আমাদের সারা বাড়িতে শ্বাস প্রশ্বাসের বড়ো অনটন নাগো ।।


আমি হাসছি কেননা বাতাসে দূষণ নেই ।। হোমোইরেকটাসের থেকে হোমোসেপিয়েন্স দের সব থেকে বড় বায়োলজিকাল তফাৎ আমাদের ফ্রন্টাল কর্টেক্সএর লোব গুলি এবনর্মালভাবে বাড়ছিল ।।। একটা অস্বাভাবিকতা ।।। আমাদের এই সভ্যতা একটা এবনর্মাল মাথার বৃদ্ধির ফল ।।।


আমরা ছাদে উঠে এলাম ।। বৌ বলল দূরে তাকিয়ে দেখ আমাদের এই এসাইলাম বা সমস্ত এসাইলাম বা অনেকটা এসাইলাম একটা জনজাতি নতুবা আমাদের বানানো সবটা একটা প্যারাড্ক্স কিম্বা ভয় পেও না ফ্রেড হয়েল বলেছিলেন একটা মরা নক্ষত্র থেকে আমাদের জন্ম ।। মৃতের কখনো পুনরমৃত্যু হতে পারে না ।।। আমি বাতাসের ভেসে থাকা লক্ষ্য করছি ।। বৌটির উড়ছে ।।।



Post a Comment from facebook

2 Comments

  1. বা! খুব ভালো লেখা। প্রথমত আঘাতজনিত অ্নুভবগুলো হালকাচালে রিলিজ করা, বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের ও যাপনের। পরে করোনাকে আঘাত হিসেবে গোটাটা না দেখে কিছুটা বিশ্লেষণ। শেষে লকডাউনে ব্যবসায়ির (বিশেষত ছোটো) টান-পড়ার দিকটা উন্মোচিত হয়েছে। আর একদম শেষে মনুষ্যসৃষ্ট সভ্যতা নিয়ে একটা ছোট্ট অথচ গভীর প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ভাষা ও উপস্থাপনা মার্ভেলাস। ভালো থেকো বালী।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ উমা দা @ সৌগত বালী

      Delete

Post a Comment

Previous Post Next Post