সুরম্য সাবলীল গদ্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সদাহাস্য-প্রাণের মানুষ। তাঁর লেখায় সেই প্রাণের হদিস পান পাঠক।  লিখেছেন বহু গল্প, গদ্য।  লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আজীবন।

করোনা ও কেউটে  

সাধন দাস

 

করোনাক্রান্ত কালাংশ যদি পড়তেই চান তবে বুড়োবুড়ির যুদ্ধের কথা লিখবো এই উল্লাসে লিখবো যে, আমরা দু’জন নিতান্ত সুস্থ স্বাভাবিক অনুভূতিপ্রবন মানুষ এই কষ্টে লিখবো যে বয়স হয়েছে, সামান্য বেহিসেবি অভিমানী আর দুনিয়ার কাছে একটু বেশি সহমর্মিতা আশা করি দুই ছেলে, দুই মেয়ে, এক নাতনি, সাতজনের বাড়িতে দু’জন, সাত গুণ সত্তর পাকে জড়িয়ে বাস করি।  

ছোটোছেলে মজা করে বলেছে— করোনার পরে যদি আমাদের মুখ দেখতে চাও তোমাদের ছায়াও যেনো বাড়ির বাইরে না পড়ে, কারো ছায়া যেনো বাড়িতে না ঢোকে।

সেই ১৮ মার্চ ২০২০ থেকে বিছানা টিভি জানলা উঠোন সিঁড়ি ছাদ, সিঁড়ি উঠোন জানালা টিভি বিছানা ছাদ ঘুরে ঘুরে, ঘুরে ঘুরে বাড়ি গোল কন্সন্ট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে ফেলেছি। ছায়ার দূরত্বে নিজেদের ছায়াকে অহরহ কন্সেন্ট্রশনের টাইটে রেখেছি। যেনো না বাইরে পড়ে, না কারো ভিতরে ঢোকে। ছায়া যে কত শ্বাসরুদ্ধ তালার অবাধ্য, কেমন করে লিখি! তার চেয়ে সূর্যকে মাথায় রাখা সহজ। বাবা কেনো যৌবনেই বাড়ির নাম ‘অবশেষে’ রেখেছেন, বুড়ো বয়সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি  

Source: images. app.goo.gl

বাড়ির চারদিকের একটাই সামনে জানলা খুলি বা না খুলি, নিচে দু’মুখো করোনাক্রান্ত গলি। একপ্রান্তে চাকরি হারানো অন্তু। ওদের বেঁচে থাকার তীব্র আর্তিময় বাড়িঅন্যদিকে প্রেমের ভুলে বিয়ে করে ফেলা বেকার প্রান্তিকের ক্ষয়ে আসা জেরক্সের দোকান। মাঝখানে খুশির ভান করে পড়ে থাকা আমরা কতিপয় মানুষ, গোটা পাঁচেক নেড়িকুত্তা আর ফণায় খড়ম আঁকা একটা খরিশ সাপ   আমাদের জ্যান্ত পৃথিবীর মুখপাত

Source: images. app. goo. gl/MYcvLvr4NNS8w3c9

হোলিতে জনসংযোগের ভয়ে প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনগনকে যথেষ্ট সাবধান না করে যেদিন অন্তরীণ হলেন, সেদিন থেকে এ গলিতে করোনার হাওয়া বইতে শুরু করে অন্তরীণের মাহাত্ম না বুঝে  ধ্রুব, কেষ্ট, মিষ্টু, বিষ্টুদের হোলির আবির, ঘর ফুঁড়ে ছাদে উঠে এলো। মানুষের চেয়ে নেড়িকুত্তা আর দেওয়ালগুলো পিচকিরিতে রঙীন হলো বেশি। সেই আমাদের শেষ বাস্তবের রঙ তারপর সুনসান গলিপথে শুরু হয়ে গেলো লকডাউন মানুষকে আলাদা করার, কষ্ট দেওয়ার ষড়যন্ত্র আমরা অসহায় বুড়োবুড়ি আলাদা হলে বাঁচবো না। সোশ্যাল ডিসট্যান্স ভুলে আদিম অভ্যেসের বশে চোখ বন্ধ করে জড়াজড়ি করে থাকি। যেনো আমাদের একটাই ছায়া     

বাজার যাওয়া বন্ধসব্জিমাছ নেই। রান্নাবতী বুড়ীর অঢেল সময়। টিভির আয়নায় জোড়ে করোনার দাপট দেখি। দেখে দেখে ক্লান্ত হলে জানলায় দাঁড়াই চশমার গোল কাচে জানলার চতুর্ভূজ ফ্রেমে গলির সরল রেখা। জ্যামিতিকতায় নেড়িগুলো কারো বাড়ির সামনে ল্যাজ নাড়ে, কার গেটে বাহ্যে ফেরে খরিশটা কারো বাড়ি থেকে চুপিচুপি খড়ম দেখিয়ে কারো বাড়িতে ঢুকে পড়ে অজানা গোপন থেকে হিস হিস শব্দে নিজেকে জানান দেয়। বিষের সুদীর্ঘ বক্ররেখা এখনি নেড়িদের জ্যামিতি ভেঙে রন্তিদের বাড়ি ঢুকে পড়লো চেঁচালাম - খরি...শ। খরি...শ...   

দরোজা জানালা বন্ধ। কেউ শুনলো না। ক্লান্ত হয়ে টিভির আয়নায় এসে বসি।  

 

দিন যায়। আমাদের গরিব গলিতে দু’একজন ফেরিওয়ালা চোখে পড়েকেউ মেঠো কলমি নিয়ে আসে, কেউ টাটকা চুনো মাছ। কাকা কেনেন। কাকা কেনেন। আপনারা না কিনলে খাবো কী? একদিন কিনি। সাতদিন কিনিনে গলিকে গলি আয় বন্ধ হিসেব কষে চলছে সবাই। দিন দিন হকার বাড়ছে রাত পোহাতেই কে কার ট্যাঁক আগে দখল নেবে, লড়াই শুরু হয়ে গেছে। ভোরের পুজোর ফুলতুলসি হেরে গেলো, রাত তিনটেয় হাঁকা শনপাপড়ির কাছে। রাত বিরেতে হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠেআধভাঙা ঘুম ঘোরে শুনি, দীর্ঘ করুণ হাঁক - হাতেখড়ি, বর্ণবোধ, ধারাপাত, প্লাস্টিকের অ আ ক খ... নেবে...ন...

দরোজা খুলে দেখি, কেউ নেই। ধুধু গলি। স্ট্রিটল্যাম্পের আলোয় নেড়িকুত্তাগুলো কোয়ারিন্টনের দূরত্ব মেপে শুয়ে আছে। কখনোও খরিশটাকে দেখি নেড়িকুত্তাদের দূরত্ব মেপে পরীক্ষা করতে হেলে দুলে ঘুরে বেড়ায়। শুনতে পাই, হকারের হাঁক দূর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। বিছানায় ফিরে চিৎ হয়ে শুই। কানে বাজে অ আ ক খ নেবে... ন...। হকারদের ডাক নেড়িকুত্তাদের মধ্যেও ছাপ ফেলে। রাত গভীর হলে করুণ সুরে ওরা হকারের বেহাল ব্যবসার কথা জানান দেয় দুশ্চিন্তা, ভয়, কষ্টকে সংগীতের করুণ রাগে রূপ দেয়। নেড়িদের সুর তীক্ষ্ণ হতে হতে হাঁপানির শ্বাস ওঠে। খবরেও নেড়িদের আর্তনাদ শুনি যা পৃথিবীর ব্যবসায়ী মহলের কণ্ঠস্বর বলে ভুল হয় বিজ্ঞাপণ হেঁকে হেঁকে ফিরে যায়। ক্রেতা আছে, পয়সা নেই। কেনার  হাহাকার। আমাদের প্রোটিন চাই, ভিটামিন চাই। করোনার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি চাই। দোকানে দোকানে উপচে উঠছে সামান। বিক্রির হাহাকার। ঘুম আসে না।

বুড়িকে আদর করে বলি- রাত জেগো না

বুড়ি আমাকে জড়িয়ে বলে – ঘুমোও। গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

দু’জন একসাথে বলি- বড়ো দুঃসময়। কেউ কাউকে দেখার উপায় নেই। সুস্থ থাকা খুব দরকার।

 

গলিবাসী দিন আনে দিন খায়। খিদের ভয় নেই। লকডাউন মানে না। ছোঁয়াছুঁয়ি তুচ্ছ করে বেরিয়ে পড়ে। রোগে না অনাহারে?  মৃত্যু- কে কার আগে? রাশিয়ার রাজপথে সিংহ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সে পুলিশ বেধড়ক ঠ্যাঙাচ্ছে। নদীতে মাছের মতো ইতালিতে মড়ক লেগেছে মানুষের রাস্তায়, ফুটপাতে ছটফট করে মরছে মানুষ সেনা নেমেছে ডেডবডি ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে গাড়ির ভিতর বুড়ি ঘুমোয় না। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে -ওর মধ্যে একটা দুটো জ্যান্ত মানুষ কি থাকছে না?

Source: republic world. com 24/03/2020

আমি চুপ। পাথর হয়ে আছি। প্রত্যেক গাড়ির মধ্যে প্রত্যেকটি পাশাপাশি লাশ যেনো আমি আর বুড়ি। রহস্যময় কুয়াশায় লাশ ভর্তি গাড়ির অন্তহীন মিছিল চলছে। কেঁপে উঠলাম। টের পেয়ে বুড়ি আমাকে চেপে ধরলো। বুড়িও কাঁপছে। জড়াজড়ি করে কাঁপুনি থামাতে চাইছি।       

মরণে আমেরিকা এগিয়েবে-লাগাম মানুষ মরছে ওখানে সন্দেহ হচ্ছে, মারছে না তো! লাফিয়ে লাফিয়ে সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যা তো সংখ্যাই। সংখ্যার ভিতরে ভুরি ভুরি মৃত্যু ভয়, কেনো!  মরবো যখন আমি তো একা, পৃথিবীর নির্মমতম একা। গাড়ি গাড়ি মৃত্যুভয়ে আমার কী এসে যায়! ভয় যদি পেতেই হয়, একার ভয় আমি একা পাবো। দুনিয়ার তাবৎ মৃত্যু-আতঙ্ক তবু বুকে চেপে বসছে, কেনো? সবাই মিলে বাঁচতে চাওয়ার অসহায়তা, তাই এতো ভয়! ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছি। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে? বুড়ি আতঙ্কে আমার মুখে তাকিয়ে  নাকের সামনে হাত বুকে চিমটি কাটে। চেঁচিয়ে উঠি- উফ! কী হলো?

– বেঁচে আছো কিনা দেখলাম।

 জিজ্ঞেস করলাম- রাশিয়ার সিংহ ঘরে ঢুকে পড়ছে না তো! কিংবা ফ্রান্সের পুলিশ!

Source: risingbd.com 23/03/2020
 

বুড়ি রাতেই খবর পাঠালো ছেলেদের কাছে।

মুম্বাই থেকে বড়োছেলের (মেয়ের বরকে আমরা ছেলে ডাকি) অর্ডার এলো- টিভি দেখা বন্ধ। দেখতে হলে জানলা খুলে আকাশ দেখো তারা গোনো।    

ছেলে এখন বাবা। বাবার কথা শুনতে হয়। গোল চশমার সামনে সেই চৌকো জানালা। গলির সরল মুখে দাঁড়াই এতো রাতে আলো জ্বলছে! অন্তুদের বাড়ি কেউ এলো?   

- কে? কেনো? কোথা থেকে? ফিস ফিস শব্দেরা  সারি সারি জানালা খুলে উঁকি দিলো গলিতে।

- অন্তুর দাদা, পরিযায়ী শ্রমিক।

- মুম্বাই থেকে।  

ফিসফিসেরা দরোজা খুলে বেরিয়ে এলো। - থাকা হবে না। সরকারি কোয়ারেন্টিনে যাও।

অন্তুর রোগক্লান্ত অনাহারী স্বর জেদ ধরে এগিয়ে এলো- দাদা কোত্থাও যেতে পারবে না। পুকুর ফাটা ওর পা। ফুলে গোদ। মরি এক সাথে মরবো।

- ইয়ার্কি হচ্ছে! তোদের সাথে আমরা মরতে পারবো না।

অন্তুর দাদা সন্তু এক পা দরোজার বাইরে রাখতেই গড়িয়ে পড়ে গেলো। কেঁদে ফেললো- দয়া করুন।  

ফিসফিসের পিছনে হাতে হাতে লাঠি বেরিয়ে এলো। খরিশটা অন্তুদের বাড়ি থেকে বেরুবার জন্যে মুখ বের করেছিলো। লাঠি সোটা দেখে ঢুকে গেলো। সাপটার লকলকে জিভে হাসি দেখলাম। টিভি নয়, জ্যান্ত গলিতে আজন্ম প্রতিবেশীদের রক্তারক্তি হবে। আঁচলে মুখ ঢেকে বুড়ি কঁকিয়ে উঠলো- মুম্বাই শ্মশান হয়ে যাচ্ছেবড়োছেলেও যদি চলে আসে?  

আমি চুপ। জানালা ছেড়ে টিভির কালো মুখে সুইচ অন করলাম।  

ছোটোছেলে কোলকাতা থেকে ফিক করে হেসে জানালো- দুনিয়ার কার্টুন দেখো। দাদা কিচ্ছু বলবে না।    

 

বুড়ি চুরি করে টিভিতে খবর দেখেছে। কোলকাতার ধন্বন্তরি হসপিটালে ডাক্তার, সহকর্মীদের করোনায় ধরেছেহসপিটাল বন্ধ। ছোটোছেলে ধন্বন্তরিতে কাজ করে। নিঃশব্দে বুড়ির চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।

- ওই জন্যে ছোটোছেলেটা ফোনে কথা বলে না।  কথা বলে মেয়েটা (ছেলের বৌকে আমরা মেয়ে বলি।) ছেলেটাকে নিশ্চিত করোনায় ধরেছে। কথা বলতে বললে মাউথ অর্গান বাজিয়ে খালি হোয়াটস্‌এ্যাপে পোস্ট দেয়।

মেয়েটা বলে- রুগিপত্তর নিয়ে আমাদের কাজ। কখন কী হয়! ও মাউথ অর্গান বাজিয়ে, আমি গান গেয়ে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করছি মা।

জিজ্ঞেস করে - মা, ওর ‘বড় আশা করে এসেছি গো...’  গানটা শুনেছো? কেমন বাজিয়েছে?

 

বুড়ি বলে- মরমি, (ছোটোমেয়ের নাম) ওকে হাসপাতাল যেতে বারণ কর।

পাশ থেকে ঘড়ঘড়ে দুর্বল গলায় ছেলে বলে- ধন্বন্তরিতে দিনরাত ডায়ালিসিস হয়। আমি না গেলে স্টাফরা ভয় পাবে। কাজে আসবে না। ডায়ালিসিস বন্ধ হলে কোলকাতায় যতো মানুষ করোনায় মরবে তার চেয়ে বেশি মরবে কিডনির রোগে  

কাশতে কাশতে ছেলেটার কথা বন্ধ হয়ে যায়।

মেয়েটা কাঁদে না। বলে- তোমরাই ডাক্তারি পড়িয়েছো, মাএখন যুদ্ধে পাঠাতে কাঁদছো কেনো?

বুড়ি তাড়াতাড়ি আঁচলে চোখ মুছে বলে- কৈ কাঁদছি? বলছিলাম, সুস্থ হলে না হয় যাবে।

ছেলে ফের দম নিয়ে বলে- কেঁদো না, মা ভালো হয়ে যাবো। তোমার তো যক্ষ্মা হয়েছিলো। ভালো হয়ে গেছোআমাদের দেশে যতো লোক যক্ষ্মায় মরে করোনায় তার চেয়ে অনেক কম মরছে করোনার চেয়ে করোনার ভয় বেশি ছড়ানো হচ্ছেভয় পেও না। মনে জোর রাখো। ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে’ মরমি কিন্তু সুন্দর গেয়েছে। একবার ভালো বললে না তো!

 

বড়োছেলে করোনা টেস্টের কাজ করে ল্যাবে। দুপুর একটায় কাজে গেলে পরদিন সকাল ন’টায় ফেরে। জরুরি অবস্থা চলছে। রাতের পর রাত ঘুম নেই। চোখের কোণে কালি পুরু হচ্ছে, অক্ষিপট বসে গেছেদৃষ্টি লাল। বলছে- টেস্টের রেজাল্ট বেরুলেই পজেটিভ আর পজেটিভ। 

Source: covidspot. in covid19 Tracker powered by Move in sync.
               

বড়োছেলেমেয়েদের ফ্ল্যাট থেকে মিনিট কুড়ি দূরে মুম্বাইয়ের কুখ্যাত ধারাভি (এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি) ২৮মে, ২০২০ যখন লিখছি, বন্যার বেগে ওখানে করোনা ছড়াচ্ছে লাল বিন্দু এঁকে বোঝানো হচ্ছে করোনা কোথায় কতো ভয়ংকর। বড়োমেয়ে একটা ম্যাপ পাঠিয়েছে ওদের এলাকা লাল বোমার আকৃতি নিয়েছে। কেন্দ্রে ওদের ফ্ল্যাট। সেখানে বড়ো ছেলে মেয়ে দুটো আর নাতনিটা। যে কোনো মুহূর্তে বোমা ফেটে পড়বেগ্রামের বাড়িতে অপেক্ষায় আছি, কখন আমরা উড়ে যাবো সেই বোমায়     

নাতনি বললে- জানো দাদাই, করোনা ফিউরিয়াস এনিমি। কোবরা স্নেকের চেয়ে ফিয়ার্সরাস্তায় স্টপ তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও পালাতে পারছি না। স্কুলেও না, গ্রামের বাড়িতেও না।

- এখন আসতে হবে না, দাদাই কোবরা স্নেকটা বাড়ির মধ্যে কোথাও হাইড করে আছে।  

   

দুনিয়া জুড়ে মরার কম্পিটিশান চলছে। জ্ঞানে বিজ্ঞানে সভ্যতায় হামবড়া দুনিয়া, সামান্য ভাইরাস ঠেকাতে দিশেহারা, এতো বিশৃঙ্খলা! এতো মাৎসন্যায়! মাঝে মাঝে সন্দেহ হচ্ছে, ভাইরাসের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে না তো! আমেরিকা মারতেও শ্রেষ্ঠ, মরতেও। পৃথিবীর জনগণ ধ্বংশে ওরা সবার চেয়ে এগিয়ে। করোনাতেও।

করোনার চেয়ে করোনার ভয়কে অস্ত্র হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ‘রাজপথে সিংহ ছাড়া হয়েছে’ নাকি গুজব। কোনো সিনেমার অংশ। ঘটনার চেয়ে আমরা গুজব ভালোবাসি। সিংহ আসলে ছাড়া হয়নি, ছাড়া হয়েছে সিংহের ভয় ভাইরাস আর ভয়ের তাণ্ডব চলছে। তাণ্ডবের আড়ালে চিন চুপিসাড়ে বাজার দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে চলেছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে আমেরিকাও যুদ্ধের ভয় দেখাচ্ছে। ভাইরাস আর ভয় ছড়ানো যুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে পুঁজির সাথে পুঁজির বাজার দখল শুরু হয়ে গেছে।

Source: Fake Alert TOI 23/03/2020

আইনস্টাইন বলেছিলেন- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী নিয়ে হবে জানিনে। চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ শুধু পাথর নিয়ে হবে, বলতে পারি

বলতে পারলে হয়তো পৃথিবীকে জানাতেন- ওহে রাষ্ট্রপ্রধানরা, মিলিটারি খাতে নয়, মন আর শরীরের স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত বাজেট বাড়াও।  

টিঁকে থাকার যুদ্ধে আমরা উলুখাগড়ার দল যে পক্ষেই থাকি, পাওনা- দুশ্চিন্তা, অনাহার, অসম্মান, অত্যাচার। শেষ পর্যন্ত আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে মরো মরো হয়ে বেঁচে থাকা, নয় মৃত্যু। বাঁচার আশায় জয়ের পাল্লা যে দিকে ভারী সে দিকেই গড়িয়ে চলি। জাতীয়তা বোধ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকতায় ঝুঁকে পড়ছি  

 

এক মাস পর ছোটোছেলে কাজে গেলো। খুশিতে ডগোমগো।

ফোনে জানালো -মা, ভালো হয়ে গেছি। হিঃ হিঃ... করোনাই হয়েছিলো

মা গম্ভীর - জানি। একদম আগের মতো হয়ে গেছিস তো বাবা?

- হ্যাঁ মা, কাঁদার চেষ্টা কোরো না। করোনা শেষচিহ্ন রেখে চলে গেছে। জিভে স্বাদ নেই, নাকে ঘাণ নেই। ঠিক হয়ে যাবে তোমাদের টেনশন হবে, তাই জানাইনি।   

- টেনশন আর হয় না বাবা, কান্নাও পায় না। বুকটা পাথর হয়ে গেছে।

- সত্যি? তাহলে বলি, দাদাদের তিনজনেরই জ্বর হয়েছে।

- এ্যাঁ! মিত্তি...রো? ( নাতনির নাম)

- হ্যাঁ।

- তাহলে?

– চিন্তা কোরো না। ভালো হয়ে যাবে।  

- তোরা ডাক্তার। যা করার আমাদের চেয়ে ভালো করবি সেই ভরসায় বেঁচে থাকি   

- হ্যাঁ মা ঠিক বলেছো। দেখো, দেশ জুড়ে লাখ লাখ লোকের করোনা হবে। কেউ জানবে, কেউ জানবে না। যাদের ইমিউনিটি বেশি বেঁচে যাবে।

- হ্যাঁ বাবা, সত্যি কথাটা জানাস। শুনলে বুকের পাথর হাল্কা হয়।

- পেট ভরে খাওপরিশ্রম কোরো। খেটে খাওয়া মানুষের ইমিউনিটি বেশি হয়।

বুড়ি গিয়ে জানালা খুলে দিলো। সকালের আলোয় বাইরের হাওয়া এসে ঢুকলো ঘরে। গলিতে নেড়িগুলো ঘেঁষাঘেঁষি করে শুয়ে আছে। তিন চারটে বাচ্চা মা-বাবার বুকেপিঠে লুটোপুটি খেলছে। পাঁচিলের আড়ালে খরিশটা তখন গুটিসুটি মেরে আমাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাছিলো।   



Post a Comment from facebook

1 Comments

  1. ভালো লাগল বেশ। নিজের অবস্থান থেকে এই রোগ আর এই রোগের সংকেতগুলো চিহ্নিত করা। করোনার চেয়ে করোনার ভয় ছড়ানো, এই প্রতিপাদ্যতার দিকে গেছে লেখাটা, যেখানে মানবতা বা মানবিক আচরণ দেখে খরিসও মিচকি হেসে লুকিয়ে পড়ে। বেশ, বেশ। ভালো থাকিস। বুড়োবুড়ি!!! না না ছোড়ছুড়ি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post