মিশন গ্রিন ইউনিভার্স প্রকল্প কে সামনে রেখে পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা প্রসারে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।  অল্প বয়সেই তাঁর কর্মপরিধি অবাক করার মতো।  লেখার হাতটিও ভালো। The man who stole rain গল্পের জন্য পেয়েছেন Tata lit live  পুরস্কার।

প্রকৃতি হত্যা? নাকি প্রকৃতির সাথে সহবস্থান। কোনটি চান ?

অর্ধেন্দু বিশ্বাস


আচ্ছা ধরুন এই যাত্রায় এই অতিমারীর কবল থেকে রক্ষা পেয়ে গেলেন। কী করবেন প্রকৃতি হত্যা বন্ধ করবেন? নাকি এই কঠিন সময়ের কথা ভুলে যাবেন এবং প্রকৃতির প্রতি অত্যাচার দেখেও চুপ থাকবেন? অবশ্য কঠিন সময়ের কথা ভুলে যাওয়াই শ্রেয় কিন্তু ভুলে গিয়ে যা বেঁচে থাকে তা হলো শিক্ষা এবং সেই শিক্ষা থেকে নিজেদের বিমুখ রাখলে কি হয় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ আজকের এই বিশ্ব বিপর্যয়। আমরা ইতিহাস পড়ি কিন্তু ইতিহাসের নির্যাসকে যাপন করি না। হরপ্পা সভ্যতা তথা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতারগুলোর পতনের পেছনে প্রকৃতি তথা পরিবেশের বিনাশ ছিল অন্যতম কারণ। তবুও আমরা পরিবেশের প্রতি সহমর্মী হতে পারিনি একবিংশ শতাব্দীতে এসেও। শতাব্দী কুখ্যাত বিশ্ব মহামারিও কি একবিংশ শতকের সভ্যতাকে কিছুই শেখাতে পারবে না?


অনেকেই আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করার নিদান দিয়ে চলেছি কিন্তু প্রকৃতি কি নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ্য রাখে না? নাকি যে মানুষ নিজেদের মহামারির গ্রাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, সেই মানুষ প্রকৃতিকে রক্ষা করার সাধ্য রাখে? হ্যাঁ প্রকৃতিকে বিনষ্ট করতে পারি তাতে সন্দেহ নেই। আসলে প্রকৃতি নিজেকে সামলে নিতে জানে এবং হয়তো নিজেকে সামলে নিচ্ছেও। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা প্রকৃতিকে তার নিজের মতো করে থাকতে দিচ্ছি না। প্রতি মুহূর্তে তার যথেচ্ছ পরিবর্তন করে চলেছি। ফলে প্রকৃতি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে এবং মানুষ হোক বা প্রকৃতি কেউই তার নিজস্বতা হারাতে চায় না। মৃত্যুর আগে অন্তিম সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে। উন্মাদ হয়ে ওঠে। তখন চেনা পৃথিবীর নিয়ম বদলে যায়। বন্দী পৃথিবী মুক্তি খুঁজে নেয় এবং যারা নিজেদের স্বার্থে প্রকৃতিকে বন্দী করে রেখেছিল এতদিন, তারা গৃহবন্দী হয়ে যায়। খাঁচার পাখিরা আকাশে উড়ে বেড়ায়, বনের প্রাণীরা ঘুরে ঘুরে শহরের অলিগলি পর্যবেক্ষণ করে কোনো মানুষ উঁকি দিচ্ছে নাকি। এটিই প্রকৃতির পরিহাস!


এখন প্রশ্ন হলো উপায় কি? কিভাবে প্রকৃতির সাথে সহবস্থান করে বা তাল রেখে চলা যায়?

মোদ্দা কথা হলো বিপদ থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না। বিপদকে করতে হবে জয়। তাই শুধু প্রকৃতি হত্যা নয়, একটি বিশ্ব সবুজ সংস্কৃতি চাই। আর প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রকৃতিকে অনুভব করতে হবে এবং এই প্রকৃতি যাপন অনুশীলন করতে হবে শৈশব থেকেই। সেটি সম্ভব প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে।রোদ, বৃষ্টি,মাটির অনুভূতি রেখে। প্রকৃতি থেকে পালিয়ে সম্ভব নয়। 


আর সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা প্রায় সকলেই জানি যে আমাদের কোন কোন কাজ প্রকৃতির সর্বনাশ ডেকে আনছে। যে ৪-জি বা ৫-জি গতিতে আমরা প্রকৃতি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি, তাতে হয়তো চাঁদে বা মঙ্গলে যাওয়া সম্ভব কিন্তু রোগ বা অতিমারি থেকে নিস্তার সম্ভব নয়। আর মঙ্গল বা চাঁদে গিয়েই বা কী করবো? আমরা যখন জ্যান্ত পৃথিবীকে হত্যা করতে পারি, তখন চাঁদ আর মঙ্গল কি রেহাই পাবে মানুষের হাত থেকে ? 


তাই প্রকৃতি লুন্ঠন নয়, চাই প্রকৃতির প্রতি সত্যিকারের সহমর্মিতা। নিজের ঘরে আগুন লাগলে আমরা তো চুপ করে বসে থাকি না। তাহলে আমার পৃথিবী মায়ের আঁচল- অরণ্যে যখন আগুন লাগে, তখন কেন লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমোয়? আমার আদরের সন্তানের গায়ে একটু আঁচ লাগলে তো অস্থির হয়ে পড়ি, তবে জঙ্গলের নিরীহ প্রাণীগুলো যখন ঝলসে যায়, তখন কেন খবরের কাগজে পেজ উল্টে মেকি বিনোদন খুঁজে বেড়ায়? আসলে আমরা সহমর্মী কম, উপদেষ্টা বেশি।


 আর এই প্রকৃতিকে সুস্থ রাখতে গেলে আহামরি বিশেষ কিছু করতে হবে এমনটিও নয়।  ঘর বাড়ি ছেড়ে বনে গিয়ে বসবাস করতে হবে তাও না। আমাদের সর্বস্তরের মানুষকে একটু একটু করে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে এবং সেগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। এটি যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, তাই বিশ্ব বিপর্যয়ের প্রতিকারে বিশ্ব সবুজ সংস্কৃতিতে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ চাই। সবুজ সংস্কৃতি বলতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সমানুভূতির প্রতিফলন থাকা চায়। যেমন একটি গাছ কাটার আগে যেন দুটি গাছ লাগানো‌ এবং তার বিপদ সীমা না পেরোনো পর্যন্ত দেখভাল করা। অনেকে এবার বলবে জায়গা কোথায় পাবো?তাদের বলবো ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। জায়গার অভাবের জন্য বাড়ি করা তো থেমে নেই, তাহলে গাছের বেলায় কেন গা ছাড়া ভাব। যাদের জায়গা নেই রাস্তার ধারে লাগান, সোসাইটিতে, স্কুল কলেজ, ক্লাব খেলার মাঠ, ভাগাড় শ্মশানে লাগান বা কোনো সংস্থার মাধ্যমে লাগান বা তাদের সাহায্য করুন।  তেমনি জল ব্যবহার করছেন, করুন কিন্তু আপনার ছাদের জল রাস্তায় না নামিয়ে মাটির নিচে ভৌমজলকে রিচার্জ করার ব্যবস্থা করুন। খাদ্যের ক্ষেত্রে আপনি যতো খাবেন খান কিন্তু নষ্ট করবেন না, কারণ শুধুমাত্র ভারতবর্ষে জাতিসংঘের উন্নয়ন পর্ষদের হিসেবে অনুযায়ী মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৪০% নষ্ট হয় এবং মোট কৃষি দ্রব্য ও শাকসবজির প্রায় ১৬ % অপচয় হয়। ( উৎস‒ Google)  অর্থাৎ সেই খাদ্য বা সবজি উৎপাদন করতে যে জল লেগেছে তার অপচয়,সারের অপচয় ও মানব সম্পদের অপচয়। আমরা যেমন প্রতিদিন শ্বাস কার্যের জন্য প্রায় ১১০০০ লিটার বায়ু  ব্যবহার করে থাকি এবং তার প্রায় ২০% অক্সিজেন অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২২০০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন আমার, আপনার। তার জন্য বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে নিজের অক্সিজেন নিজেই উৎপাদন করতে পারি এবং সেই সাথে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে পাবলিক যানবাহন যেমন ট্রেন বাস বা সাইকেলে ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ জল, বায়ু, মৃত্তিকা,মন  প্রত্যেকেরই যেনো স্বাভাবিকতা না হারায়‌ সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং এই প্রকৃতি— সমানুভূতি আমাদের প্রজন্মকে শৈশব থেকেই শেখাতে হবে। আগামী প্রজন্মের মধ্যে যাতে প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ তৈরি হয় তার জন্য ঋতুভিত্তিক প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে উৎসাহ দিতে মিশন গ্রীন ইউনিভার্সের ১ কোটি বৃক্ষরোপণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মিশন গ্রীন ইউনিভার্স বিশ্বাস করে একটি বিশ্বজনীন পরিবেশ বিপ্লবই আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে পারে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মিশন গ্রীন ইউনিভার্স বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিন চারাগাছ রোপণ, বিতরণ, বীজ সংগ্রহ, সচেতনতা শিবির করে চলেছে। জন্মদিন, নববর্ষ, বড়দিন, বিবাহ তথা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত অনুষ্ঠানে চারাগাছ উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সবুজ সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 


প্রকৃতির প্রতি যাতে মমত্ববোধ তৈরি হয় তার জন্য মিশন গ্রীন ইউনিভার্স ঋতুভিত্তিক প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ বা Nature Study Class এবং জরুরীকালীন জলবায়ু পরিস্থিতিতে গাছের নীচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিবেক পাঠশালার আয়োজন করে থাকে। এবং Nature Study Class-এর কথা বলা যেতে পারে। এছাড়া সবুজ দর্শন বা Green Philosophy- এর প্রচার করে আসছে। এক্ষেত্রে একটি সহনশীল প্রজন্ম তৈরির উদ্দেশ্যে শিশুদের গাছ তথা প্রকৃতির তাত্বিক বিষয় সরলভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।


আমফানের পর রীতিমতো বিশেষতঃ শহরের গাছগুলো এই অজুহাতে কেটে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে যে সেগুলো বাড়ি বা রাস্তা ঘাটের দিকে বিপর্যনকভাবে ঝুঁকে আছে। সত্যিই কি তাই? গাছ বিপর্যনক হয়ে আছে নাকি আপনি গাছটির অস্তিত্বের পক্ষে বিপর্যনক? গাছ শুধুমাত্র ঝড়ে পড়ে না, আসলে ফ্ল্যাট-বাড়ি, রাস্তা তৈরির সময় গাছের শেকড় গুলো কেটে ফেলা হয়েছিলো। তাই এই বিষয়ে চোখ খোলার সময় এসেছে।


আর একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডায় পরিবেশ নিয়ে কোনো প্রকল্প থাকে না কেন? তাই আমাদের সকলকেই এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে এবং এই বিষয়ে মিশন গ্রীন ইউনিভার্স 

'Vote For Nature, Vote For Future' অভিযান শুরু করতে চলেছে এবং সকলের এই বিষয়ে চর্চার আহ্বান করা হচ্ছে। অনেক হয়েছে, এখন প্রকৃতির জন্য কাজ করার সময়, It's Time For Nature because No Nature, No Future.


অনেক করেছি কাদা ছোড়াছুড়ি। লকডাউনে ঘরে বসে অনেক ভাবনা চিন্তা, আত্মমন্থন হয়েছে যা বিগত ১০০ বছরের ইতিহাসে হয়তো হয়নি। এবার কিন্তু কাজের সময়। আর সেই কাজ শুধুমাত্র ভোগের জন্য নয়, আমার আপনার সন্তানের সুস্থ পৃথিবীর জন্য করতে হবে, কেননা অসুস্থ পৃথিবীতে আমাদের শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের স্বপ্ন বদ্ধ উন্মাদও দেখে কিনা সন্দেহ আছে। তাই বিভেদ, বিদ্বেষ, বিনাশ নয়, বিবেক বৃক্ষ বই চাই।


Founder Mission Green Universe, The Green Philosophy Movement.

Contact- 8926034318, biswasardhendu14@gmail.com


Post a Comment from facebook

Post a Comment from Blogger

Previous Post Next Post