কৃষিকাজ করলেওমনে-প্রাণে কবি। চাষ ও বাস উত্তর-চব্বিশ-পরগনার হাবড়ায়। কবিতায় নতুন ও অন্যরকম
কাজ করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছেন অসংখ্য কবিতা। চূড়ান্ত সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিমান।
মহামহিম
বিশ্বরূপ বিশ্বাস
১.
মহামারী,
জ্বরা, ব্যাধি, মৃত্যু, খরা, ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, তা ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত ভয়ঙ্কর
প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো মানুষকে মহান হ'তে শেখায়। মানুষকে শেখায় দুনিয়ার সকল
বিপর্যয়গুলো যে, তুমি কত ক্ষুদ্র একটি জীবন। তোমার সংসার, চতুর্দিকে সাজানো তোমার
বাড়িঘর, তোমার ব্যক্তিগত পরিবার একটি মুহূর্তের সামান্য একটি নিমেষ মাত্র। এরা
তোমার জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসিকান্না, আনন্দ, বেদনার সাথী মাত্র। কিন্তু সারথি নয়।
মহাজাগতিক পৃথ্বীর পরিপূরক নয়। ধরণীর ধূলিকণারা যেমন মহাকাশের মানচিত্র নয়, আবার
মহাকাশের মানচিত্ররাও তেমন মাটির পৃথিবীর বিচিত্র পর্যটন ভূমিতল নয়। তুমি ভূমিকা
নিয়েছো হয়তো নিষ্ঠুরতার। কিন্তু প্রকৃতি ভূমিকা নিয়েছে মহাপ্রলয়ের। প্রস্থানের
আকাশগঙ্গা দিয়ে যেন রাশি রাশি তথাগত আজও দুঃখস্নাত হ'য়ে শ্মশানচিতায় জ্বালে
যামিনীর অসম্ভব পরাভব। ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান অখণ্ড অশ্রুর ন্যায় চোখের কণীনিকা
হ'তে মননের বাগানে সম্পাতের অকাল হিমানী।
এই আমার কথা-ই ধ'রুন না। না হয় ব'লি আমার কথা-ই একটু গাঁয়ের। না হয় ব'লি
ঝড়ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সুপার সাইক্লোনের কথা-ই। ২০২০ সালের ২০ মে। সারাদিন ঝোড়ো হাওয়া
আর প্রবল বৃষ্টিপাত। তার-ই মধ্যে আমি আমার বাড়ির ইলেকট্রিক লাইনের তার খুলে
বৈদ্যুতিক পোলের সঙ্গে বেঁধে রেখে এলাম। কারণ বাড়িতে প্রচুর সংখ্যক লম্বুগাছ,
আমগাছ, জামগাছ, কাঁঠালগাছ, কদমগাছ, নিমগাছ, নারিকেলগাছ আরো অগণিত বৃক্ষের সমাহারে
পরিপূর্ণ নিজের বাড়ি। যেন সুবিস্তীর্ণ আরণ্যক-ভূমি।
এরপর দুপুর গড়িয়ে যত বৈকালিক দুয়ারে পৌঁছায় বেলা, তত-ই বাড়ে ঘূর্ণাবর্তের
গ্রাসচ্ছলনার প্রচণ্ড তাণ্ডবনৃত্য। তারপর রাত ৭টার পর থেকে-ই মোটামুটি শুরু হয়
মহাপ্রলয়। আকাশ বাতাস ধ্বনিত হ'তে হ'তে রাত ৮টার পরের থেকে ঝড়ের গতি চূর্ণচার
ক'রতে থাকে সংশয়হীন ধ্বংসলীলা। মটমট ক'রে একের পর এক গাছের লাশ প'ড়তে থাকে বাড়ির
উঠোনে। তার কিছুক্ষণ পরে দেখি আগুনের হল্কা। চতুর্দিকের অদৃশ্য কোন ঈশ্বরের করাহত
প্রান্তরকে আলোকিত ক'রে যেন ধেয়ে আসছে তীব্রতার সঙ্গে দৈবিক কোনো রশ্মি। পরে
জেনেছিলাম হাওয়ার প্রচণ্ড ঘূর্ণাবর্তের ঘর্ষণের ফলে ঐ জলন্ত অগ্নিগর্ভ সৃষ্টি
হ'চ্ছে হাওয়ার-ই শূন্যস্থানে।
এর-ই মধ্যে দেখি আমার বাড়ির পিছনে যারা থাকে, তারা ঐ ঝড়ের ভিতর দিয়ে দৌড়াদৌড়ি
ক'রে ছুটে যাচ্ছে দূরের কোনো নিরাপদ স্থানে। কারণ তাদের ঘর ছিলো টিনের। তারপর হঠাৎ
আমি শুনতে পাই ঘরের ছাদে ধম ক'রে বোমা পড়ার মতন বীভৎস এক শব্দ হ'লো। সিঁড়ি বেয়ে
চিলেকোঠার থেকে দেখি বড়ো এক লম্বুগাছ ভেঙ্গে প'ড়েছে চিলেকোঠার উপর দিয়ে এসে
ছাদে। এ সবের মধ্যেও দেখি সুন্টু আমার সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসেছে ছাদের
কিনারে দাঁড়িয়ে নির্ভীক ভাবে। সুন্টুকে ডেকে নিয়ে এসে ২জনে-ই নীচে নামলাম। নীচে
এসে দেখি মা বাবা ঐশ্বরিক বন্দনার স্তবে মুখরিত ক'রছে ঘরের বিমনা-কক্ষস্থান। আমি
জানি পৃথিবীতে বিপদকালীন অবস্থায় সকল জীবন-ই স্মরণাপন্ন হয় সেই অপার করুণাময়
জীবনের কাছে। মানুষ মুখোমুখি হ'তে চায় সেই অপার্থিব, অলৌকিক বিধার কাছে, যে
তাদেরকে বিপদ থেকে ক'রবে ত্রাণ। এই অদৃশ্য, অনন্ত প্রাসঙ্গিক ত্রাণকর্তাকে-ই মানুষ
বলে ঈশ্বর, ভগবান, পরমাত্মা।
তবে আমি কভু বিপদকালে স্মরণ লই না ঈশ্বরের। বরং আমার রাগ-ই হয় আপন স্বার্থান্বেষী
অভিসন্ধিকে সিদ্ধি করবার জন্য ঈশ্বরকে ডাকা। আমি বিশ্বাস ক'রি ঈশ্বর আছে স্রেফ
জীবনের অপার্থিব মুক্তির জন্য। তাঁর প্রতি মানুষের ম'নের বিশ্বাস রাখা উচিত নিঃশেষ
ভাবে নিঃস্ব হবার লাগি। দুনিয়ার সকল জাগতিক এবং পার্থিব বন্ধকে ছিন্নভিন্ন করবার
জন্য-ই তাঁর স্মরণাপন্ন হ'তে হয় মানুষের। তা ছাড়া কোনো স্বার্থসিদ্ধি জন্য
ঈশ্বরের স্মরণাগত হ'তে নেই।
অগত্যা মা বাবার প্রতি আমার রাগ-ই হ'লো। তাই ঘরের বারান্দা ছেড়ে আমি আমার নিজের
কক্ষে প্রবেশ ক'রলাম। যেহেতু কারেন্ট নেই তাই হ্যারিকেন নিয়ে নিজের-ই একটা
অপ্রকাশিত কবিতা প'ড়তে লাগলাম। কবিতাটির কয়েকটি লাইন দেওয়া জরুরি:
এ জীবনে রাধা-কৃষ্ণ মেলে না।
না মেলে বৃন্দাবন।
না পাওয়া যায় বাঁশি
মাঠের পাটপচা-জল থেকে উঠে
আসে মেয়ে
শরীরে পচাজলের অস্বাভাবিক ঘ্রাণের ডাকঘর
লতাগুল্মের উপরে নাঙ্গা কিশোরগঞ্জের গৃহপালিত
ছেলেটি যেন রাজকন্যার
কখন এলে বলো এ মধুর ঘটনার বদ্ধ-শ্রাবন্তনে
লন্ঠন জ্ব'লছে দিনের আলোয়
ভাল্লাগছে জিভের রশুই
পৃথিবীর ডোরে কালো আর আলোর অনাবৃত উষ্মেদক
এ হাওয়ায় বনতুলসীর নৃত্যপরবশ মেলে না
এ সুসজ্জিত আতুরে মেলে না
মাংশাশী ফুলের পিয়ানো
পতঙ্গ
(সংক্ষিপ্ত অংশ : প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ : সিরিয়াস কবিতা)
এভাবে চ'ললো কিছুক্ষণ।
তারপর একটা সময় সুন্টুকে ডেকে মা দুধভাত খেতে দিলো। আমাকেও ডাকলো খাবার জন্য। আমি
ব'ললাম খাবো না। তারপর দেখলাম মা আর বাবা কেউ-ই খাওয়া-দাওয়া ক'রলো না রাতের।
সুন্টু-ই শুধু খেয়ে ঐ প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হ'য়ে গ্যালো
নিশাচরী-শিকারের সন্ধানে।
ঝড়ের মধ্যে আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম। সেটা এখানে উল্লেখ ক'রি : উত্তর ২৪
পরগনা জেলাতে থাকি। এই মুহূর্তে আমার এখানে আমফানের যে মহাতাণ্ডবনৃত্য শুরু
হ'য়েছে, ম'নে হ'চ্ছে মহাপ্রলয়ের আগের মুহূর্ত। গাছগুলো মড়মড় ক'রে ভেঙ্গে
প'ড়ছে। ঘরবাড়ি, গোয়ালঘর কাঁপছে। জানি না ঠিক কি হবে কালকে পর্যন্ত। ঝড়বৃষ্টির
কোনো শেষ নেই যেন।
২.
এ শরীর নশ্বর
এ দেহ কীট পতঙ্গ মাটির
এই আত্মা ঈশ্বরের
এ জীবন পৃথিবীর।।
(অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ভগবান বিশ্বরূপ)
মানুষ
নামক জল্লাদের মতন নৃশংস পৃথিবীর কোনো ঝড়-ই নয়। মানুষের সৃষ্টি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
মতন কোনো ভয়ঙ্কর অপরাধ আর পৃথিবীতে ঘটে নাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতন দুনিয়ার কলিজা
ঠাণ্ডা ক'রে দেওয়া ধ্বংসলীলা আর কোনো বিপর্যয়-ই ঘটায় নাই। তবু মানুষজনেরা ঝড়, বন্যা,
খরা, মহামারী, ভূমিকম্পকে অযথা দোষারোপ করে। আমি বরাবর-ই চেয়েছি পৃথিবীর থেকে মানুষ
প্রজাতির বিলুপ্তি ঘ'টুক। আমি ম'রে গিয়ে আমার বাসস্থান হোক সহস্র পশু পাখি কীট পতঙ্গিকাদের।
আমার হাড়ের জৈবসারের অণুখাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকুক কোনো উদ্ভিদ কিংবা আগাছা। আমার ঘরের
ছাদ ফাটিয়ে দিয়ে তার ভিতর থেকে বের হোক কোনো সুদীর্ঘ বটগাছ। আমার দুশ্চিন্তা হয় ঝড়
বন্যা খরা প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় হ'লে পশু, পাখি, কীট, পতঙ্গ, আর মহাপৃথিবীর গাছগাছালিকে
নিয়ে। তবে আমি সাংঘাতিক ভালোবাসি মানুষ নামক প্রাণীদের ছোটো ছোটো শিশুদের। যারা নিষ্পাপ।
যারা সরল। যারা গাছের মত-ই নরম হৃদয়ের মীরে নিজেকে রাখে আলোয় আলোকময়। ২০ তারিখ সবচেয়ে বড়ো
বিপর্যয়ের ঝড় চ'ললো মোটামুটি ২ ঘন্টা মতন। প্রথমে ব'ইছিলো পূর্ব-উত্তরে হাওয়া। সঙ্গে
হাড়কাঁপানো দমকা। তারপর ব'ইতে শুরু ক'রলো দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওয়া। সঙ্গে সেই এক-ই হাড়কাঁপানো
দমকা। তারপর ঝড়ের গতি চূর্ণচার হ'তে শুরু ক'রলো। আমি তখন বুঝলাম পৃথিবীর পরিশ্রান্ত
রাতের পরিসমাপ্তির আগে এই ঝড় ক'মে যাবে পৃথিবীর। ২১ তারিখে এক অপার্থিব
বীভৎসতা নিয়ে পৃথিবীতে ধ্বংসাবশেষের সকাল এসেছে দেখলাম। নিজের ঘর থেকে বের হ'তে-ই পারিনি
তারপর। কারণ সারি সারি গাছ ভেঙ্গে প'ড়ে পুরো উঠোনসহ ঘরের দরজা ব্লক। দেখি রান্নাঘর
গোয়ালঘর সব ভেঙ্গে চূর্ণচার হ'য়ে গ্যাছে। ছাদে উঠে দেখি গাছ প'ড়ে চিলেকোঠা ভেঙে গ্যাছে।
বারান্দা ফেটে গ্যাছে। তারপর জমির দিকে তাকালে দেখলাম পাট, তিল, ধান সব শেষ। পাখিরা
ম'রে ম'রে প'ড়ে আছে। রাস্তায় বের হ'য়ে দেখলাম সমস্ত রাস্তাও ব্লক গাছ আর ইলেকট্রিক
লাইনের তার আর পোল ভেঙ্গে প'ড়ে প'ড়ে। গ্রামের ১০০ শতাংশ ঘরের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ
ঘর ভাঙ্গা। লম্বুগাছ, জামগাছ, আমগাছ তা ছাড়া সব বড়ো বড়ো গাছেরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিরটা
দৈত্যের মতন প'ড়ে আছে সমস্ত জায়গাতে। পৃথিবীর এই অপূর্ব বীভৎসতার
কাছে আমি মস্তক নামালাম সশরীরে। এরপর গ্রামের খালপাড়ে গেলাম। গিয়ে আরো এক মর্মান্তিক
দৃশ্যের সামনে উপস্থিত হ'লো আমার জীবন। সেখানে দেখি সমস্ত প্রিয়বাবলা গাছগুলো শিকড়সহ
উপড়ে প'ড়ে আছে খালের সামান্য জল ছুঁয়ে। এই পৃথিবীতে আমি আর কোনোদিনও আমার এই প্রিয়বাবলা
গাছগুলোকে দেখতে পারবো না ভেবে কান্না পেলো। সত্যশ্রীলতার মতন শরীরের চোখ থেকে আগুনের
ফুলকির মতন ঝরেও প'ড়লো অশ্রু। আমি সেই অশ্রুকে আবার পরিসমাপ্তির শান্তিতে বিসর্জন
দিলাম আরো একটু হেঁটে যাওয়ার স্বাস্থ্যবতী উৎসাহের চলাফেরায়। এরপর রাস্তায় উঠলাম আবার
খালপাড় ছেড়ে। একটি ভিডিও-ও সংগ্রহ ক'রলাম। ভিডিওর লিংকটি র'ইলো এখানে।
৩.
মানুষ-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খলনায়ক যারা প্রকৃতিকে ধ্বংস ক'রে নিজেরা-ই ঈশ্বর হ'তে
চায়। পাপ-পুণ্যের বিচার এনে যদি এই মানুষকে ঘোরতর পাপী বলা যায়, তাহ'লে এই পৃথিবীর
সকল মানুষেরা-ই মহাপাপী কেবল প্রকৃতিকে নৃশংস ভাবে ধ্বংস করার কারণে। সন্তদের
পূজা-পার্বণের বিচার ছিল ঠিক-ই কিন্তু প্রকৃতিকে রক্ষা করার দায়িত্বে সমর্পিত ছিলো
কতটুকু এই দুনিয়ার মানুষেরা। শত্রু আর শরিকের মতন মহাপৃথিবীর এই অসম্ভব সুন্দর
প্রকৃতিকে মানুষেরা শেষ ক'রে হ'য়েছে অত্যাশ্চর্য দানব। তাই মানুষের দুঃখ কষ্টে
আমার পরাণ ব্যথিত হয় না সেরকম। আমার নিজেরও যন্ত্রণায় আমি নিজে-ই হই মারাত্মক-ই
খুশী এবং সুখী। ফুর্তির সম্মাননা দিয়ে আমি মানুষের পীড়নকে সাদরে ক'রেছি আমন্ত্রণ
মানুষের-ই সংসারে। পার্থিব জগতের সংসারের এই পেয়ালা ভ'রে থরে-বিথরে মানুষকে কেবল
তুমি যন্ত্রণা-ই দাও হে বিশ্বপ্রকৃতি। তারা যেন কভুও সুখী না হ'তে পারে স্পষ্টতর
জড়চিত্রের বিচারে।
২১ তারিখ সকালে বাড়ির বাইরে বের হ'য়ে আশেপাশের কয়েকজনের ঘর ভেঙে চূর্ণচার হওয়া
দেখে চমকে গেলাম। দীননাথ বিশ্বাস নামে একজন বৃদ্ধা আর তার স্ত্রী ঐ ঝড়ের মধ্যে
যখন তাদের ঘরের উপরে গাছ প'ড়ে ভেঙ্গে যায়, তখন তারা নিজেদের বাথরুমের ভিতরে গিয়ে
আশ্রয় নেয় এবং সারারাত নাকি বাথরুমের ভিতরে-ই দাঁড়িয়ে থাকে দুজনে। রাজু সরকারের
শিরীষগাছ শিকড়সহ উল্টে প'ড়ে ২টো গোরু মারা যায়। এরকম অজস্র অপার ঘটনার সম্মুখীন
হ'লাম। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হ'লো কৃষিফসল সব শেষ হ'য়ে গ্যাছে মাঠের। সেই
পরিস্থিতি চাক্ষুষ করা ভারী কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ভারী অদ্ভুত রকমের ব্যাপার হ'লো
ঝড়ের ১০-১৫ দিন পরেও আমার এখানে কারেন্ট এলো না। আমি ১১দিন পরে ফেসবুকে একটা
পোস্ট দিলাম। সেটা নীচে উল্লেখ করা হ'লো :
একটানা ১১দিন কারেন্ট নেই আমার এখানে। ফোন চার্জ দিতে হ'চ্ছে ৩০ টাকা দিয়ে। নিজেরা
যতটা সম্ভব রাস্তার ভাঙ্গা গাছগুলো কেটে কেটে পরিষ্কার ক'রেছি। গ্রামের মেম্বার
কিংবা সরকারি কোনো সহযোগিতা এখনো গ্রামের কেউ পাইনি। বরং কোথা থেকে যেন সব কিছু
ভিতরে ভিতরে লুটপাট চ'লছে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের। সাধারণ মানুষের দিকে তাদের কোনো
দৃষ্টি নেই। তারা যেন এই ঘোর-দুর্যোগের দিনে হাতে স্বর্গ পেয়েছে সরকারী টাকা পয়সা
লুটে নেওয়ার। যা প্রকৃত ভাবে পাওয়ার কথা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের। এদিকে আমার
এখানে ছেঁড়া কারেন্টের তার ঠিক করবার জন্য অনেক টাকা চাইছে কর্মীরা। ধ'রুন ১০ কি
১৫ হাজার। এটা কিন্তু কারুর বাড়ির মিটারের ছেঁড়া তার ঠিক করবার জন্য নয়, তারা
পুরোগ্রামের যেখানে যেখানে ইলেকট্রিক পোল ভেঙ্গে প'ড়ে তার ছিঁড়ে গ্যাছে, তারা
ব'লছে এই বিপুল সংখ্যক টাকা না দিলে, আপাততঃ তারা ইলেকট্রিক লাইন জুড়বে না, এটা
কী কালোবাজারি চ'লছে? নাকি সবখানে-ই ছেঁড়া তার এবং পোল বসানোর জন্য এরকম বিপুল
পরিমাণ টাকা দিতে হ'চ্ছে ইলেকট্রিক অফিসের কর্মীদের? প্রকৃতি মানুষকে দুর্যোগ
দিয়েছে, এমন দুর্দিনে মানুষের পাশে মানুষের-ই দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু পৃথিবীতে
মানুষ-ই যে মহাশয়তান, মহাভণ্ড আজো সেটা বারংবার প্রমাণিত হয়। অনুভব ক'রি মানুষ কত
দুরাচারী।
এই পরিস্থিতি-ই ঘটলো। রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করা চোরেরা সাধারণ মানুষের সব কিছু
চিরকালব্যাপী চুরি ক'রে-ই নিলো। এ বেলাতেও তার অন্যরূপ ঘটলো না। একজন মন্ত্রী এলেন
ঝড়ের ১৭ দিন পরে গ্রামে। তিনি এসে ব'ললেন আপানাদের সহযোগিতা করা হবে যথেষ্ট।
কিন্তু কিছু-ই করা হ'লো না। বরং তার নিজেস্ব দলের প্রতিনিধিরা সব কিছু পেলেন। যারা
সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত হ'য়েছে।
এই মানবসমাজ কলুষিত মহামহিমে তুমি এসো ঝড়। এই হাঁদাইমার্কা জোচ্চুরিবাজ
পলিটিকালের রাজত্বে তুমি এসো মহামতি মহামারী। ক্রোধের ছিঁচকে মায়ায় ধরাশায়ী যে
মনুষ্যলোক, সেই মনুষ্যলোকের অবসম্ভাবী পতন নিয়ে এসো হে জ্বরা, ব্যাধি, মৃত্যু।
পশ্চাতে লাথি কষো সজোরে যেভাবে করোনা আজ বিরাজিছে প্রকৃত ভয় হয়ে। ধর্মের নামে যে
মূর্খ ব্যভিচারী সমাজ অদ্যোপান্ত অনলের শিখায় অন্ধকারের ন্যায় উজ্জ্বল, তাকে
ভস্মীভূত করো সূর্যোদয়ের আজ্ঞাপত্রে। যে মনুষ্যসমাজ বিবেকহীনতার ক্রীতদাস হ'য়ে
বৃক্ষ হত্যা করে, অসহায় পশুপাখিদেরকে নির্মম ভাবে মারে, তাদের বেঁচেবর্তে থাকা
ক্যানো আজো। সত্যি-ই উপদ্রব ঘ'টুক এভাবে, যেভাবে শিকারী বিড়ালের ভয়ে সন্ত্রস্ত
হয় ছোট্ট ইঁদুর।।
বেড়ে লিখেছো। এ-ও ক্ষত। জীবনের ক্ষত, যাপনের ক্ষত, সত্তার ক্ষত। একটা গ্রামে এই 'উমপুন' যে আড়াই-ঘন্টার ছায়াছবিটা তৈরি করে তার চিত্রনাট্য এই লেখা। ভয়-শিহরণ-কষ্ট-আবেগ-দর্শন-মিশ্রিত এক ডকুমেন্টেশন। ভালো লাগল। ভালো থেকো।
বেড়ে লিখেছো। এ-ও ক্ষত। জীবনের ক্ষত, যাপনের ক্ষত, সত্তার ক্ষত। একটা গ্রামে এই 'উমপুন' যে আড়াই-ঘন্টার ছায়াছবিটা তৈরি করে তার চিত্রনাট্য এই লেখা। ভয়-শিহরণ-কষ্ট-আবেগ-দর্শন-মিশ্রিত এক ডকুমেন্টেশন। ভালো লাগল। ভালো থেকো।
ReplyDeleteমানুষকে দোষ দিয়ে লিখেছেন বলেই আরও ভালো লাগল।
ReplyDeleteএরকম জ্যান্ত অনুভবের সামনে নীরবশ্রদ্ধা জানাতেই হয়
ReplyDeletePost a Comment